সিলেট ০২:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
News Title :
চা-শ্রমিক পরিবারের মেয়ে ইতির ঢাবিতে ভর্তির সাফল্য: বরমচাল বাগানে আনন্দের ঢেউ। বানিয়াচং কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশন বৃত্তি পরীক্ষায় শাহরিয়ার আদনানের সুপার ট্যালেন্ট বৃত্তি অর্জন। লোকগানের কিংবদন্তী সাধক খোয়াজ মিয়া আর নেই শাল্লার ললিতার চিকিৎসায় মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. নুসরাতের মহতী উদ্যোগ: কৃতজ্ঞ শাল্লাবাসী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইতিবাচক প্রভাব: এক মানবিক ঘটনা।। সিলেটে ৪৫ দিনের শিশুকে গলা কেটে হত্যা, পিতার আত্মহত্যার চেষ্টা, বানিয়াচংয়ে লালন মিয়ার ছাদ বাগানে ৫০ কেজি আঙুর সংগ্রহ: এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। বানিয়াচংয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফলদ চারা ও কৃষকদের মাঝে সার-বীজ বিতরণ আজ থেকে সারা দেশে একযোগে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু: সিলেট বোর্ডে পরীক্ষার্থী কমেছে ১৩ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি’র ত্রয়োদশ কংগ্রেসের খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে হবিগঞ্জে সভা অনুষ্ঠিত।

চা-শ্রমিক পরিবারের মেয়ে ইতির ঢাবিতে ভর্তির সাফল্য: বরমচাল বাগানে আনন্দের ঢেউ।

মেধাবী চা-কন্যা ইতি গৌড় ।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা-বাগানের ডিপো লাইনের বাসিন্দা ইতি গৌড় (১৯) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ইতি এর আগে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগেও তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন বলে জানান। শেষে ইতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২৬ জুন বৃহস্পতিবার সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন বলে জানাগেছে।
ইতির এই সাফল্য বরমচাল চা-বাগানের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই বাগান থেকে এর আগে কেউ কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাননি। ইতির পরিবার এবং স্থানীয় বাসিন্দারা তার এই অর্জনে অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত।
*ইতির জীবন সংগ্রামের এক অনন্য উদাহরণ। তিন বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ইতি। প্রায় দুই বছর আগে তার মা সুমিত্রা গৌড়, যিনি একজন চা-শ্রমিক ছিলেন, অসুস্থ হয়ে মারা যান। ইতির বাবা শংকর গৌড় বাপেক্সের স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্রে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করতেন, কিন্তু ২০১৮ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তাকে চাকরি ছাড়তে হয়। বর্তমানে তিনিও অসুস্থ।
*পড়াশোনার পথে অদম্য ইতি
বরমচাল মিশন স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ইতি বরমচাল উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে ভর্তি হন। ২০২২ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৬৭ এবং ২০২৪ সালে ইউছুফ-গণি কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৮৩ অর্জন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন ইতির দীর্ঘদিনের। এইচএসসির পর তিনি কঠোর প্রস্তুতি শুরু করেন এবং ঢাকা, শাহজালাল, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন। জগন্নাথে ভালো না হওয়ায় এবং জাহাঙ্গীরনগরে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকায় তিনি কিছুটা হতাশ হলেও, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে সুযোগ পেয়ে ভর্তি হয়ে যান। তবে এর কয়েকদিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে সুযোগ পাওয়ায় তিনি শাহজালাল থেকে ভর্তি বাতিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
পরিবারের ত্যাগ ও শিক্ষানুরাগীদের সহায়তা
ইতির বড় বোন স্মৃতি গৌড়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তার স্বামী ঢাকায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেন। মেজ বোন সুইটি গৌড় ঢাকার মিরপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নার্সিং কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। মায়ের নামে থাকা দুই বিঘা জমি বিক্রি করে তার বাবার চিকিৎসা, সুইটির পড়াশোনা ও ইতির ভর্তির খরচ চালানো হয়েছে বলে ইতির পরিবার জানান।
ইতির বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার খবর শুনে স্থানীয় কিছু অনেক মানুষ ও শিক্ষানুরাগী তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেক মানুষ তার ভর্তির জন্য খরচ দিয়েছেন। এবং চা-বাগানের শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলোও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন ইতি জানান।
*ভবিষ্যতের স্বপ্ন: চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার আকাঙ্ক্ষা
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ইতি বলেন, “আগে ভালোভাবে লেখাপড়া শেষ করতে চাই। ভালো রেজাল্ট হলে চাকরি পাওয়া কঠিন হবে না। ফিন্যান্সের পড়া শেষ করে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা আছে।”
ইতির বাবা শংকর গৌড় মেয়ের এমন সাফল্যে অত্যন্ত খুশি। মেয়েদের জন্য আশীর্বাদ সব সময় করছেন তিনি।
ইতির সাফল্যে বাগানের সব মানুষ ও শিক্ষকবৃন্দ এবং এলাকাবাসী সবাই খুশি। বাগানে আনন্দের ঢেউ লেগেছে।
বরমচাল চা-বাগানের ব্যবস্থাপক শাহরিয়ার পারভেজ জানিয়েছেন, ইতির বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়টি তাকে কেউ জানাননি, তবে তিনি খোঁজখবর নেবেন।
ইতি গৌড়ের এই অর্জন শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং বরমচাল চা-বাগানের শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস। তার এই পথচলা চা-বাগান অঞ্চলের শিক্ষার প্রসারে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা করা যায়। ইতির এমন সাফল্যে অনলাইন সিলেট পরিবার পক্ষ থেকে অভিনন্দন ।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চা-শ্রমিক পরিবারের মেয়ে ইতির ঢাবিতে ভর্তির সাফল্য: বরমচাল বাগানে আনন্দের ঢেউ।

চা-শ্রমিক পরিবারের মেয়ে ইতির ঢাবিতে ভর্তির সাফল্য: বরমচাল বাগানে আনন্দের ঢেউ।

সময় ১০:৪৫:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
মেধাবী চা-কন্যা ইতি গৌড় ।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা-বাগানের ডিপো লাইনের বাসিন্দা ইতি গৌড় (১৯) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ইতি এর আগে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগেও তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন বলে জানান। শেষে ইতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২৬ জুন বৃহস্পতিবার সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন বলে জানাগেছে।
ইতির এই সাফল্য বরমচাল চা-বাগানের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই বাগান থেকে এর আগে কেউ কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাননি। ইতির পরিবার এবং স্থানীয় বাসিন্দারা তার এই অর্জনে অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত।
*ইতির জীবন সংগ্রামের এক অনন্য উদাহরণ। তিন বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ইতি। প্রায় দুই বছর আগে তার মা সুমিত্রা গৌড়, যিনি একজন চা-শ্রমিক ছিলেন, অসুস্থ হয়ে মারা যান। ইতির বাবা শংকর গৌড় বাপেক্সের স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্রে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করতেন, কিন্তু ২০১৮ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তাকে চাকরি ছাড়তে হয়। বর্তমানে তিনিও অসুস্থ।
*পড়াশোনার পথে অদম্য ইতি
বরমচাল মিশন স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ইতি বরমচাল উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে ভর্তি হন। ২০২২ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৬৭ এবং ২০২৪ সালে ইউছুফ-গণি কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৮৩ অর্জন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন ইতির দীর্ঘদিনের। এইচএসসির পর তিনি কঠোর প্রস্তুতি শুরু করেন এবং ঢাকা, শাহজালাল, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন। জগন্নাথে ভালো না হওয়ায় এবং জাহাঙ্গীরনগরে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকায় তিনি কিছুটা হতাশ হলেও, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে সুযোগ পেয়ে ভর্তি হয়ে যান। তবে এর কয়েকদিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে সুযোগ পাওয়ায় তিনি শাহজালাল থেকে ভর্তি বাতিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
পরিবারের ত্যাগ ও শিক্ষানুরাগীদের সহায়তা
ইতির বড় বোন স্মৃতি গৌড়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তার স্বামী ঢাকায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেন। মেজ বোন সুইটি গৌড় ঢাকার মিরপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নার্সিং কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। মায়ের নামে থাকা দুই বিঘা জমি বিক্রি করে তার বাবার চিকিৎসা, সুইটির পড়াশোনা ও ইতির ভর্তির খরচ চালানো হয়েছে বলে ইতির পরিবার জানান।
ইতির বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার খবর শুনে স্থানীয় কিছু অনেক মানুষ ও শিক্ষানুরাগী তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেক মানুষ তার ভর্তির জন্য খরচ দিয়েছেন। এবং চা-বাগানের শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলোও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন ইতি জানান।
*ভবিষ্যতের স্বপ্ন: চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার আকাঙ্ক্ষা
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ইতি বলেন, “আগে ভালোভাবে লেখাপড়া শেষ করতে চাই। ভালো রেজাল্ট হলে চাকরি পাওয়া কঠিন হবে না। ফিন্যান্সের পড়া শেষ করে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা আছে।”
ইতির বাবা শংকর গৌড় মেয়ের এমন সাফল্যে অত্যন্ত খুশি। মেয়েদের জন্য আশীর্বাদ সব সময় করছেন তিনি।
ইতির সাফল্যে বাগানের সব মানুষ ও শিক্ষকবৃন্দ এবং এলাকাবাসী সবাই খুশি। বাগানে আনন্দের ঢেউ লেগেছে।
বরমচাল চা-বাগানের ব্যবস্থাপক শাহরিয়ার পারভেজ জানিয়েছেন, ইতির বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়টি তাকে কেউ জানাননি, তবে তিনি খোঁজখবর নেবেন।
ইতি গৌড়ের এই অর্জন শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং বরমচাল চা-বাগানের শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস। তার এই পথচলা চা-বাগান অঞ্চলের শিক্ষার প্রসারে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা করা যায়। ইতির এমন সাফল্যে অনলাইন সিলেট পরিবার পক্ষ থেকে অভিনন্দন ।