
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে নিখোঁজ একাদশ শ্রেণির ছাত্রী লাবনী আক্তারকে (১৬) ঘিরে রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে নিখোঁজ এই কলেজছাত্রীকে তিন দিনেও খুঁজে না পাওয়ায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে। শুরুতে নিখোঁজের ঘটনা হিসেবে দেখা হলেও, তার রেখে যাওয়া একটি চিরকুট পুরো বিষয়টিকে নতুন দিকে মোড় দিয়েছে।
পরিবারের ভাষ্যমতে, গত ৩ সেপ্টেম্বর সকালে লাবনী কিছু নগদ টাকা, গয়না ও জামাকাপড় নিয়ে হবিগঞ্জের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। পরদিন তার পরিবার বানিয়াচং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। নিখোঁজ হওয়ার দিন রাতে লাবনীর বড় ভাই তার মোবাইল নম্বরে ফোন করলে লাবনী জানান, তিনি হবিগঞ্জের রাজনগরে আছেন এবং যে জায়গায় আছেন তার গেটে তালা দেওয়া। এর কিছুক্ষণ পরই তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়।
নিখোঁজ হওয়ার পরদিন পরিবারের সদস্যরা লাবনীর খাতা ও বইপত্র খুঁজে দেখতে গিয়ে একটি চার পৃষ্ঠার চিরকুট পান। এটি তার মায়ের উদ্দেশ্যে লেখা। চিরকুটে লাবনী লিখেছেন, ছোটবেলা থেকেই তার কম্পিউটার শেখার খুব আগ্রহ ছিল, কিন্তু পরিবারের আপত্তির ভয়ে তিনি কখনো এ কথা বলতে পারেননি। তাই তিনি সরকারি খরচে চার মাসের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিতে হবিগঞ্জে যাচ্ছেন এবং সেখানে তিনি মনোনীতও হয়েছেন।
চিরকুটে লাবনী বারবার লিখেছেন, তিনি কোনো ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যাননি এবং পরিবার যেন তাকে খুঁজতে চেষ্টা না করে। তিনি তার মাকে বিশ্বাস করতে অনুরোধ করেছেন এবং জানিয়েছেন চার মাস পর তিনি নিজেই বাড়ি ফিরবেন।
এই চিরকুটের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হবিগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) চার মাসের কোনো প্রশিক্ষণ কোর্স নেই, বরং তিন মাসের কোর্স রয়েছে। টিটিসি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে, তাদের আগস্ট থেকে নভেম্বরের প্রশিক্ষণার্থী তালিকায় লাবনী আক্তার নামে কোনো ছাত্রীর নাম নেই।
পরিবারের দাবি, লাবনী বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় তার মায়ের ৭ হাজার এবং বোনের ২ হাজার টাকা, মোট ৯ হাজার টাকা ও কিছু গয়না নিয়ে গেছেন। তাদের ধারণা, তাদের মেয়ে কোনো প্রলোভনে পড়ে আটকে আছেন এবং সম্ভবত কোনো বিপদের মধ্যে আছেন।
বানিয়াচং থানার সেকেন্ড অফিসার আমিনুল ইসলাম জানান, পরিবারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি জিডি নথিভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে, বানিয়াচং থানার নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেছেন, তিনি বিষয়টি অবগত আছেন এবং লাবনীকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
চিরকুটে লাবনীর স্বেচ্ছায় যাওয়ার ইঙ্গিত থাকলেও টিটিসি কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, কম্পিউটার প্রশিক্ষণে তার ভর্তির তথ্য সঠিক নয়। এতে এলাকাবাসী ও পরিবারের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, লাবনী সত্যিই কি কম্পিউটার শিখতে গেছেন, নাকি অন্য কোনো কারণে তিনি বাড়ি ছেড়েছেন? এই রহস্যের জট কবে খুলবে, তা নিয়েই এখন সবাই চিন্তিত।