
সিলেট জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে স্থাপিত ‘প্রেস’ ঢাকায় সরিয়ে নেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আজ সিলেট প্রেসক্লাব ও সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে পৃথকভাবে দুটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সিলেটবাসীর পক্ষে কর্নেল (অব.) পীর আতাউর রহমান এই লিখিত বক্তব্য সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন এবং সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি এটিকে সিলেটের প্রতি প্রশাসনের একটি ‘পরিকল্পিত বিদ্বেষ’ বলে আখ্যায়িত করেন।
সিলেটের মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ কর্নেল (অব.) পীর আতাউর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, সিলেট বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অঞ্চল। দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী অধ্যুষিত এই জনপদের মানুষের বিরাট অবদান রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, দেশের প্রশাসনে থাকা একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তারই অংশ হিসেবে এবার সেটেলমেন্ট অফিসের গুরুত্বপূর্ণ প্রেসটি ঢাকায় সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
পীর আতাউর রহমান জানান, ১৯৮৭-৮৮ সাল থেকে সিলেটে ৩৯ টি উপজেলায় ভূমি জরিপ কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো তা পুরোপুরি শেষ হয়নি।
বিভাগের ৫ হাজার ৪শ ৫৭টি মৌজার মধ্যে এখনো ৩৮টি মৌজার জরিপ অসম্পূর্ণ রয়েছে। এবং ছাতক উপজেলার ১৪১ টি মৌজার জরিপ কাজ বাকী আছে।

সিলেট মিউনিসিপালিটি মৌজায় অবস্থিত হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার শরিফ এলাকার খতিয়ান ছাপার কাজও এখনও শুরু হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে প্রেসটি ঢাকায় স্থানান্তরিত হলে জরিপ কার্যক্রমে আরও দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ২০১২ সালে তৎকালীন জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার ইউসুফ আলীর প্রচেষ্টায় সিলেটে একটি মিনি প্রেস স্থাপিত হয়। এতে ভূমি মালিকদের ভোগান্তি কমে আসে এবং ভূমি জরিপের কাজ গতি পায়।
আগে ঢাকা থেকে পরচা ও নকশা ছাপাতে ২০ থেকে ২২ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতো। কিন্তু সিলেটে প্রেস স্থাপন হওয়ায় জনগণ দ্রুততার সাথে তাদের জমির স্বত্বলিপি হাতে পাচ্ছেন ভূমির মালিকগণ।
পীর আতাউর রহমান আরও উল্লেখ করেন, গত ১২ আগস্ট ২০২৫ তারিখে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর থেকে এক আদেশে সিলেট থেকে প্রেস স্থানান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই নির্দেশনার বিরুদ্ধে তারা এরই মধ্যে মানববন্ধন করেছেন এবং আজ সাংবাদিক সম্মেলন করে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি সরকার দ্রুত এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তাহলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবেন এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও তাদের সঙ্গে
একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, সিলেটের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখারও আহবান জানান।
’সিলেট বিদ্বেষী চক্রের’ কারসাজি
সংবাদ সম্মেলনে পীর আতাউর রহমান অভিযোগ করেন, সিলেটের সাবেক জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার কাজী মাহবুব উর রহমান এবং তার সহযোগী কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে একটি লিখিত পত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রেস স্থানান্তরের প্রস্তাব দেন।
সিলেটে কিছু অসাধু সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা এখনও সক্রিয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এরা সবাই কাজী মাহবুব উর রহমানের দোসর বলে পরিচিত। কাজী মাহবুব উর রহমানের এই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই ঢাকা থেকে প্রেস স্থানান্তরের চিঠি আসে। যদিও তাকে তার বিভিন্ন বির্তকিত কর্মকাণ্ডের কারণে ইতোমধ্যে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে, তার এই প্রস্তাবের কারণে সিলেটবাসী এখন চরম ভোগান্তিতে পড়তে যাচ্ছেন।
পীর আতাউর রহমান, তিনি গণমাধ্যমকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই আন্দোলন শুধু সিলেটবাসীর নয়, এটি ন্যায় ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। তিনি আশা করেন, এই লড়াইয়ে সকল গণমাধ্যম তাদের পাশে থাকবেন বলে সাংবাদিকদের কাছে আহবান জানান।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের ও উত্তর দেন পীর আতাউর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেটের ভূমি মালিকদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবুল কাসেম, ভূমি মালিক ও সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী জাহেদ আহমদ প্রমুখ।