আবদুল হক মামুন।

হবিগঞ্জের মানুষের কাছে ডা. মো. জমির আলী শুধু একজন চিকিৎসক নন, বরং তিনি একটি প্রতিষ্ঠান, এক জীবন্ত কিংবদন্তি। শিশুদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, নিরহংকার জীবনযাপন এবং মানবিক সেবা তাঁকে করে তুলেছে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।
বানিয়াচং উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা ডা. মো. জমির আলী তাঁর চিকিৎসা জীবন শুরু করেন বাংলাদেশে। এরপর তিনি পেশাগত কারণে পাড়ি জমান সৌদি আরবে, যেখানে তায়েফ শিশু হাসপাতাল ও কিং ফয়সাল হাসপাতালে দীর্ঘদিন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (RMO) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উন্নত বিশ্বের সুযোগ-সুবিধাকে পেছনে ফেলে তিনি নিজের মাতৃভূমি ও মানুষের টানে দেশে ফিরে আসেন।

হবিগঞ্জে ফিরে তিনি শিশুদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর আন্তরিকতা, দক্ষতা এবং মানবিকতার কারণে তিনি হবিগঞ্জের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য শিশু চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। রোগী দেখা তাঁর কাছে নিছক একটি দায়িত্ব নয়, বরং প্রতিটি শিশুর প্রতি তাঁর মানবিক ভালোবাসা ও মমত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ। বিশেষ করে অসচ্ছল পরিবারের শিশুদের তিনি বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেন, কখনো বা ওষুধের খরচও নিজেই বহন করেন। শিশুদের কোলে তুলে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার সেই বিরল দৃশ্য তাঁর মানবিকতারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এতে শুধু শিশুর ভয়ই দূর হয় না, বরং এটি চিকিৎসক ও রোগীর পরিবারের মধ্যে এক গভীর মানবিক বন্ধন তৈরি করে।

ডা. জমির আলী রোগীদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসেন। চেম্বারে আসা বাচ্চাদের সঙ্গে গল্প করেন, ছবি তোলেন এবং সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। চিকিৎসকের পরিচয় ছাপিয়ে তখন তিনি হয়ে ওঠেন একজন স্নেহশীল অভিভাবক। তাঁর মুখে মৃদু হাসি যেন প্রতিটি শিশুর সুস্থতা ও নিরাপত্তাই তাঁর জীবনের পরম সার্থকতা। তিনি নিম্নমানের কোম্পানির ওষুধ লেখেন না এবং অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে সবসময় বিরত থাকেন। এ কারণেই মানুষ তাঁকে কেবল একজন ডাক্তার নয়, ‘গরীবের বন্ধু’ ও ‘মানবতার আশ্রয়’ হিসেবে জানে।
চিকিৎসক হিসেবে সফলতার পাশাপাশি তিনি একজন সমাজসেবকও। রোটারি ইন্টারন্যাশনালের প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসেবে তাঁর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তিনি এখনো কর্মচঞ্চল এবং হাসিমুখে হবিগঞ্জের শিশুদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ডা. জমির আলীর মতো মানুষেরা আমাদের শেখান যে, পেশা নয়, মানুষের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা এবং মানবিকতাই একজন মানুষকে সত্যিকার অর্থে মহান করে তোলে।
আমার জানামতে বানিয়াচংয়ে স্বাধীনতা পরবর্তীতে যে কয়জন ডাক্তার আছেন তাদের মধ্যে ডাক্তার চাচা অন্যতম। তখনকার সময় সিলেট মেডিকেলে খুবই কম সংখ্যক মানুষ সেসময় পড়াশোনার সুযোগ পেতেন। চাচার দুই ছেলেও ডাক্তার। ছেলেদের স্ত্রীরাও ডাক্তার। সুনামের সাথে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।
উনার স্ত্রী আমার চাচি তাহমিনা বেগম গিনি। তিনিও হবিগঞ্জ জেলার মধ্যে একজন সুলেখক ও সামাজিক আন্দোলনের সামনের সারির নেত্রী। তিনি কবি সাহিত্যিক হিসেবে জেলায় সুপরিচিত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। ডাক্তার জমির আলী চাচার পরিবার একটি সুশিক্ষিত পরিবার।
জমির আলী চাচার পথ অনুসরণ করে ইদানীং বানিয়াচংয়ে মধ্যে আমাদের এলাকায় ডাক্তারের সংখ্যা বেশি। নন্দীপাড়ার মরহুম ডা. আবু তাহের ভাইয়ের দুই মেয়ে এখন পুরোপুরি ডাক্তার। ডা. এখলাস ভাইয়ের ছেলেও ডাক্তার হওয়ার পথে। দত্তপাড়ার সবিনয় বাবুর ছেলে ডা. জয় এবার মাগুরা মেডিকেল থেকে বের হল।
ওসমানী মেডিকেল থেকে ইনাতখানীর কৃষি অফিসার আলম উদ্দিন মামার মেয়ে ডাক্তারী জলি পাশ করে এখন চাকুরীরত। ইনাতখানীর বাসিন্দা আশরাফ আলী খান ভাইয়ের ছেলে আকরাম খান ডাক্তারী পাশ করে চাকরি করছে।
আমার কন্যা আজরা সাদিয়া প্রান্তি এবার ফাইনাল ইয়ারে, নন্দীপাড়া মোশাহিদ মিয়ার মেয়েও এবার ফাইনাল ইয়ারে। হাফেজ জাহেদ ভাইয়ের ছেলে এবার চতুর্থ বর্ষে। দাসপাড়ার উবেদুর রহমান কামাল উনার ছেলে এবার এমবিবিএস ১ম বর্ষে জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে। এছাড়াও সামনের দিনে আমাদের এলাকা থেকে আরও ডাক্তার বের হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
পরিশেষে অনলাইন সিলেট নিউজ পোর্টালের পক্ষ থেকে ডাক্তার জমির আলী চাচার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
লেখক- সম্পাদক, অনলাইন সিলেট ডটকম।
(ডা. জমির আলীর ভাতিজা)