সিলেট ১০:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫
News Title :
‎নবীগঞ্জে চোরাই মোবাইল উদ্ধারে গিয়ে পুলিশের ওপর হামলা: ৫ জন আটক, ৬ পুলিশ সদস্য আহত‎ ‎নবীগঞ্জে আত্মহত্যা ও দাঙ্গা প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসনের সচেতনতামূলক সভা‎ সিলেটের জৈন্তাপুরে পালিত হলো জাতীয় কন্যা শিশু দিবস ‎ধনবাড়ীতে ওলামা দলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত: আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত ‎সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় গরু-মহিষের চোরাচালান আটক: বিজিবি’র সাফল্য ‎সখীপুরে মুসলিম জুয়েলার্সকে ১ লাখ টাকা জরিমানা ‎ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে হবিগঞ্জে আইনজীবীদের মানববন্ধন ‎টাঙ্গাইল সদরে চাড়াবাড়ি এস ডি এস ব্রীজের পশ্চিম অংশ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন মৃতের স্ত্রী হত্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিক পরিবারকে হয়রানি, তদন্ত প্রতিবেদনের উপর তিনবার নারাজি ॥ ‎চট্টগ্রামের উদয়ন এক্সপ্রেস মোগলাবাজারে লাইনচ্যুত: রেলপথে ব্যাপক শিডিউল বিপর্যয়‎

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি‘কমলা রাণীর দিঘী’

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ইতিহাস ঐতিহ্যের লালনভূমি কিংবদন্তী গ্রামের নাম হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গ। বর্তমানে পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে বানিয়াচঙ্গ খ্যাতি লাভ করেছে। এক সময় বানিয়াচঙ্গ ছিল প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী। মোগল আমল থেকেই তিলোত্তমা এ গ্রামটি শহর হিসেবে পরিচিত।
আজ থেকে শত’ শত বছর পূর্বেই বিভিন্ন রূপ কথা ও কাব্যে বানিয়াচঙ্গ শহর হিসেবে বিধৃত রয়েছে। প্রাচীন লোক সাহিত্যের স্বনামধন্য প্রকাশনা ড. দীনেশ সেন রচিত ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র দেওয়ানা মদিনা বিবির সংলাপে বানিয়াচঙ্গ এর উল্ল্যেখ রয়েছে এভাবে, ভাইয়েরে বুঝাইয়া কয়/ তুমি সোদর ভাই/তোমার কাছেতে মোর কিছুই গোপন নাই/তুমি যাও পরানের পুত্র সুরুযেরে লইয়া/কাসেমের খবর এক আনহ জানিয়া/আমার সগল কথা তাহারে বলিবা/তাহার মনের কথা যত সগল শুনিবা/এইনা বলিয়া বিবি পাঠায় তারারে/যাইতে যাইতে গেল তারা বাইন্যাচঙ্গ শহরে।
গর্ব করার মতো ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর দেড় লক্ষাধিক লোক অধ্যুষিত এ গ্রামটির দীর্ঘ অবস্থান ভৌগোলিক ধারাকেও পাল্টে দিয়েছে। ‘কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয় ১টি ইউনিয়ন’ ভূগোলের এ চিরায়িত ধারাটি বানিয়াচঙ্গয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, কারণ কয়েকটি গ্রাম নিয়ে ইউনিয়ন নয়, কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে বানিয়াচঙ্গ গ্রামের অবস্থান। ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ৫ কিলোমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট এ গ্রামটি ৪টি ইউনিয়ন ও ১২০টি মহল্লায় বিভক্ত। ভৌগোলিক সুদৃঢ় অবস্থানের কারণেই হয়তো প্রাচীনকালে এ গ্রামটি রাজধানী শহর হিসেবে সমাদৃত হয়েছিল।
রাজ কেশব মিশ্রের প্রপৌত্র রাজা পদ্মনাভ গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে খনন করিয়েছিলেন দেশের সর্ব বৃহৎ দীঘি। যা কমলা রাণীর দীঘি/কমলাবতীর দীঘি ও সাগরদিঘী হিসেবে সুপরিচিত। ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১ কিলোমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট ৬৬ একর জমির উপর খনন করা হয়েছে এ বিশাল দীঘি। এর খননের সাথে ১টি প্রাচীন লোক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে।
১৯৪২ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান জার্মান বিরোধী প্রচারণায় বনিয়াচঙ্গে এসে পল্লী কবি জসিম উদ্দিন এই দীঘির পাড়ে বসে রচনা করেছিলেন তার বিখ্যাত কবিতা, ‘কমলা রাণীর দীঘি’। যার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন প্রয়াত শিক্ষক হেমেন্দ্র চন্দ্র পোদ্দার ও সাবেক মন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খান। কবিতাটি জসিম উদ্দিনের ‘সূচয়নী’ কবিতা সংকলনে স্থান পায়। এই কাহিনী নিয়ে একটি সিনেমা ও হয়েছে। ঐতিহাসিক এ দীঘিকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের রাম সাগর ও বরিশালের দূর্গা সাগরের মত উল্ল্যেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব।
এখনও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকরা এর নয়নাভিরাম দৃশ্য অবলোকণে পদার্পণ করে থাকেন।
দীঘির পশ্চিমে এলআর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী একটি বাড়ীতে রয়েছে প্রাচীন রাজ প্রসাদের ধ্বংসাবশেষ। রাজা গোবিন্দ সিংহ ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর দিল্লী থেকে বানিয়াচঙ্গে ফিরে এসে দীঘির পাড়ে নির্মাণ করেছিলেন এ রাজ বাড়ী। পরিত্যক্ত রাজ প্রাসাদের পাশেই আছে কয়েকটি মসৃণ পাথরের স্তম্ভ। লোকজন এগুলোকে ‘হব্যা’ গোমা’র দাড়া গুড্ডি বলে। ইতিহাসবিদের দাবী এসব ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংরক্ষণের দাবী জানান। পাশাপাশি একটি যাদুরঘর নির্মাণেরও তাগিদ দেন তারা।
নামকরণ বা অন্যান্য বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও বানিয়াচঙ্গ যে স্বাধীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী ছিল এটি অস্বীকার করার অবকাশ নেই। গ্রামের অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শনই এর অকাট্য প্রমাণ বহন করে। তৎকালীন রাজা বাদশারা তাদের রাজধানী বানিয়াচঙ্গ শহর রক্ষার্থে গ্রামের চারদিকে প্রতিরক্ষা পরিখা হিসেবে তৈরী করেছিলেন আয়তক্ষেত্রের মত গড়ের খাল। এ খাল খননের সময় পাওয়া যায় রাজা আনোয়ার খাঁ’র সময়কার একটি ঐতিহাসিক কামান। যা বর্তমানে সিলেট পুলিশ লাইনে রক্ষিত আছে। এ ছাড়া দীঘির পাড়ে রাজা হবিব খা’র নির্মাণকৃত রাজবাড়ী এখনও রাজধানীর সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। অন্যদিকে বানিয়াচঙ্গের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লার নামকরণেও প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। ত্বোপখানা, তীরকর মহল্লা, পাঠানটুলা, মজলিশপুর, সংগ্রাম রায়ের পাড়া, ঢালি মহল্লা, তকবাজখানী, আমীরখানী, ইনাত খানী ও শরীফ খানী এসব নামকরণ বিশ্লেষণ করলেও বানিয়াচঙ্গ যে লাউড়া রাজ্যের রাজধানী ছিল তা সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হয়।
স্বাধীনতাত্তোর বিভিন্ন সরকার বানিয়াচঙ্গের ঐতিহাসিক কমলারাণীর দিঘীটিকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের প্রতিশ্রতি দিয়ে আসলেও বরাবরই তা উপেক্ষিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বানিয়াচঙ্গ সফরে আসলে কমলারাণী দিঘীর পাড়ে বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বানিয়াচঙ্গবাসীর একমাত্র দাবী ছিল কমলারাণীর দিঘীকে পর্যটনকেন্দ্র করার। এ দাবীর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় কমলারাণীর দিঘীটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। কিন্তু এরপরও এর কোন বাস্তবায়ন দেখতে পায়নি বানিয়াচঙ্গবাসী।
পর্যটন ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনাময় আর ইতিহাস-ঐতিহ্যের লালন ভূমি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি যেন এই বানিয়াচঙ্গ।
বানিয়াচঙ্গ গ্রামটি কর্তৃপক্ষের যথাযথ হস্তক্ষেপে হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের এক অপরুপ পর্যটন স্থানে এবং কোলাহলে মুখরিত হতে পারে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আগমনে। শুধু যে বানিয়াচঙ্গ গ্রামের নামটি দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে যাবে তাই নয়, এখান থেকে সরকারও আয় করতে পারে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। সেজন্যে বানিয়াচঙ্গ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বৃহত্তম গ্রাম হওয়ার কারণে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে। পৃথিবীর বৃহত্তম এ গ্রামের ঐতিহ্য ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণ এবং কমলারাণীর দিঘীটিকে পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তর এখন সময়ের দাবি।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

‎নবীগঞ্জে চোরাই মোবাইল উদ্ধারে গিয়ে পুলিশের ওপর হামলা: ৫ জন আটক, ৬ পুলিশ সদস্য আহত‎

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি‘কমলা রাণীর দিঘী’

সময় ১২:১২:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ইতিহাস ঐতিহ্যের লালনভূমি কিংবদন্তী গ্রামের নাম হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গ। বর্তমানে পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে বানিয়াচঙ্গ খ্যাতি লাভ করেছে। এক সময় বানিয়াচঙ্গ ছিল প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী। মোগল আমল থেকেই তিলোত্তমা এ গ্রামটি শহর হিসেবে পরিচিত।
আজ থেকে শত’ শত বছর পূর্বেই বিভিন্ন রূপ কথা ও কাব্যে বানিয়াচঙ্গ শহর হিসেবে বিধৃত রয়েছে। প্রাচীন লোক সাহিত্যের স্বনামধন্য প্রকাশনা ড. দীনেশ সেন রচিত ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র দেওয়ানা মদিনা বিবির সংলাপে বানিয়াচঙ্গ এর উল্ল্যেখ রয়েছে এভাবে, ভাইয়েরে বুঝাইয়া কয়/ তুমি সোদর ভাই/তোমার কাছেতে মোর কিছুই গোপন নাই/তুমি যাও পরানের পুত্র সুরুযেরে লইয়া/কাসেমের খবর এক আনহ জানিয়া/আমার সগল কথা তাহারে বলিবা/তাহার মনের কথা যত সগল শুনিবা/এইনা বলিয়া বিবি পাঠায় তারারে/যাইতে যাইতে গেল তারা বাইন্যাচঙ্গ শহরে।
গর্ব করার মতো ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর দেড় লক্ষাধিক লোক অধ্যুষিত এ গ্রামটির দীর্ঘ অবস্থান ভৌগোলিক ধারাকেও পাল্টে দিয়েছে। ‘কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয় ১টি ইউনিয়ন’ ভূগোলের এ চিরায়িত ধারাটি বানিয়াচঙ্গয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, কারণ কয়েকটি গ্রাম নিয়ে ইউনিয়ন নয়, কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে বানিয়াচঙ্গ গ্রামের অবস্থান। ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ৫ কিলোমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট এ গ্রামটি ৪টি ইউনিয়ন ও ১২০টি মহল্লায় বিভক্ত। ভৌগোলিক সুদৃঢ় অবস্থানের কারণেই হয়তো প্রাচীনকালে এ গ্রামটি রাজধানী শহর হিসেবে সমাদৃত হয়েছিল।
রাজ কেশব মিশ্রের প্রপৌত্র রাজা পদ্মনাভ গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে খনন করিয়েছিলেন দেশের সর্ব বৃহৎ দীঘি। যা কমলা রাণীর দীঘি/কমলাবতীর দীঘি ও সাগরদিঘী হিসেবে সুপরিচিত। ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১ কিলোমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট ৬৬ একর জমির উপর খনন করা হয়েছে এ বিশাল দীঘি। এর খননের সাথে ১টি প্রাচীন লোক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে।
১৯৪২ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান জার্মান বিরোধী প্রচারণায় বনিয়াচঙ্গে এসে পল্লী কবি জসিম উদ্দিন এই দীঘির পাড়ে বসে রচনা করেছিলেন তার বিখ্যাত কবিতা, ‘কমলা রাণীর দীঘি’। যার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন প্রয়াত শিক্ষক হেমেন্দ্র চন্দ্র পোদ্দার ও সাবেক মন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খান। কবিতাটি জসিম উদ্দিনের ‘সূচয়নী’ কবিতা সংকলনে স্থান পায়। এই কাহিনী নিয়ে একটি সিনেমা ও হয়েছে। ঐতিহাসিক এ দীঘিকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের রাম সাগর ও বরিশালের দূর্গা সাগরের মত উল্ল্যেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব।
এখনও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকরা এর নয়নাভিরাম দৃশ্য অবলোকণে পদার্পণ করে থাকেন।
দীঘির পশ্চিমে এলআর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী একটি বাড়ীতে রয়েছে প্রাচীন রাজ প্রসাদের ধ্বংসাবশেষ। রাজা গোবিন্দ সিংহ ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর দিল্লী থেকে বানিয়াচঙ্গে ফিরে এসে দীঘির পাড়ে নির্মাণ করেছিলেন এ রাজ বাড়ী। পরিত্যক্ত রাজ প্রাসাদের পাশেই আছে কয়েকটি মসৃণ পাথরের স্তম্ভ। লোকজন এগুলোকে ‘হব্যা’ গোমা’র দাড়া গুড্ডি বলে। ইতিহাসবিদের দাবী এসব ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংরক্ষণের দাবী জানান। পাশাপাশি একটি যাদুরঘর নির্মাণেরও তাগিদ দেন তারা।
নামকরণ বা অন্যান্য বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও বানিয়াচঙ্গ যে স্বাধীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী ছিল এটি অস্বীকার করার অবকাশ নেই। গ্রামের অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শনই এর অকাট্য প্রমাণ বহন করে। তৎকালীন রাজা বাদশারা তাদের রাজধানী বানিয়াচঙ্গ শহর রক্ষার্থে গ্রামের চারদিকে প্রতিরক্ষা পরিখা হিসেবে তৈরী করেছিলেন আয়তক্ষেত্রের মত গড়ের খাল। এ খাল খননের সময় পাওয়া যায় রাজা আনোয়ার খাঁ’র সময়কার একটি ঐতিহাসিক কামান। যা বর্তমানে সিলেট পুলিশ লাইনে রক্ষিত আছে। এ ছাড়া দীঘির পাড়ে রাজা হবিব খা’র নির্মাণকৃত রাজবাড়ী এখনও রাজধানীর সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। অন্যদিকে বানিয়াচঙ্গের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লার নামকরণেও প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। ত্বোপখানা, তীরকর মহল্লা, পাঠানটুলা, মজলিশপুর, সংগ্রাম রায়ের পাড়া, ঢালি মহল্লা, তকবাজখানী, আমীরখানী, ইনাত খানী ও শরীফ খানী এসব নামকরণ বিশ্লেষণ করলেও বানিয়াচঙ্গ যে লাউড়া রাজ্যের রাজধানী ছিল তা সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হয়।
স্বাধীনতাত্তোর বিভিন্ন সরকার বানিয়াচঙ্গের ঐতিহাসিক কমলারাণীর দিঘীটিকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের প্রতিশ্রতি দিয়ে আসলেও বরাবরই তা উপেক্ষিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বানিয়াচঙ্গ সফরে আসলে কমলারাণী দিঘীর পাড়ে বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বানিয়াচঙ্গবাসীর একমাত্র দাবী ছিল কমলারাণীর দিঘীকে পর্যটনকেন্দ্র করার। এ দাবীর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় কমলারাণীর দিঘীটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। কিন্তু এরপরও এর কোন বাস্তবায়ন দেখতে পায়নি বানিয়াচঙ্গবাসী।
পর্যটন ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনাময় আর ইতিহাস-ঐতিহ্যের লালন ভূমি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি যেন এই বানিয়াচঙ্গ।
বানিয়াচঙ্গ গ্রামটি কর্তৃপক্ষের যথাযথ হস্তক্ষেপে হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের এক অপরুপ পর্যটন স্থানে এবং কোলাহলে মুখরিত হতে পারে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আগমনে। শুধু যে বানিয়াচঙ্গ গ্রামের নামটি দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে যাবে তাই নয়, এখান থেকে সরকারও আয় করতে পারে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। সেজন্যে বানিয়াচঙ্গ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বৃহত্তম গ্রাম হওয়ার কারণে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে। পৃথিবীর বৃহত্তম এ গ্রামের ঐতিহ্য ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণ এবং কমলারাণীর দিঘীটিকে পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তর এখন সময়ের দাবি।