
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইসমাইল রহমান এবং সার্ভেয়ার মহি উদ্দিনের বিরুদ্ধে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছে ২ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী এই অভিযোগ এনে বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে দুটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলীর অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে তিনি মিশুক টমটম এবং পেট্রোল বিক্রির দুটি লাইসেন্সের জন্য ডিসি অফিসে আবেদন করেন। তিনি নিয়ম অনুযায়ী ৬ হাজার টাকার সরকারি চালান এবং সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। কিন্তু, তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত এসিল্যান্ড মো. ইসমাইল রহমান এক বছরের বেশি সময় ধরে এই বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন জমা দেননি।
পরে এসিল্যান্ডের নির্দেশে সার্ভেয়ার মহি উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলীকে বলেন, এই ধরনের দুটি লাইসেন্স পেতে সাধারণত ৬ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়।
তবে, যেহেতু তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, তাই ২ লাখ টাকা দিলেই লাইসেন্স দুটি পাওয়া যাবে।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য অভিযোগ
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসিল্যান্ড ইসমাইল রহমান কে মোবাইল ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি!
অন্যদিকে, ইউএনও মাহমুদা বেগম সাথী জানিয়েছেন যে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। সার্ভেয়ার মহি উদ্দিন অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন যে তিনি একটি আবেদনের প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন এবং অন্যটি প্রক্রিয়াধীন থাকাবস্থায় বদলি হয়ে শায়েস্তাগঞ্জে চলে গেছেন। তিনি আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
এদিকে, এসিল্যান্ড ইসমাইল রহমানের বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু অভিযোগ সামনে এসেছে।
তিনি এসিল্যান্ডের পাশাপাশি বানিয়াচং সদর ১নং উত্তর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক হিসেবেও অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জনসাধারণের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে।
ভূমি সংক্রান্ত হয়রানি: সাধারণ ভূমি মালিকরা নামজারির (mutation) জন্য তার কাছে গেলে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সামান্য ভুল থাকলেও তিনি নামজারি আটকে দেন, ফলে জমির মালিকরা জমি বিক্রি করতে পারছেন না এবং চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন: ব্যবসায়ীরা নতুন বা নবায়নের জন্য ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন করলে তিনি নানা ধরনের টালবাহানা করেন।
অতিরিক্ত দায়িত্ব ও কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতি: অতিরিক্ত দায়িত্বের কারণে তিনি ইউনিয়ন অফিসে নিয়মিত সময় দেন না, যা ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
তার এই ধরনের আচরণে বানিয়াচংয়ের বাসিন্দারা খুবই বিরক্ত। অনেকে মনে করছেন, তার এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।