
হবিগঞ্জের বানিয়াচং এবং আজমিরীগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী ফোরাত নদীটি গত ১৫ বছর ধরে অবৈধ দখলদারদের কবলে রয়েছে। একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট নদীটি অবৈধভাবে ইজারা দিয়ে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই সিন্ডিকেটের কারণে নদীটি থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা দরিদ্র জেলেরা এখন হুমকির মুখে।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে পরিদর্শন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এই দখলের চিত্র সামনে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বানিয়াচংয়ের লক্ষীবাওর জলাবনের শেষাংশে অবস্থিত ফোরাত নদীটি আজমিরীগঞ্জের জিলুয়া মৌজার সরকারি ১ নম্বর খতিয়ানের আরএস ৩৯৫২ এবং ৩১৫৫ দাগে রেকর্ডভুক্ত। নদীটির মোট আয়তন ৯.৩৪ একর। স্বাধীনতার পর থেকে নদীটি দুই উপজেলার মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল। সে সময় দরিদ্র জেলেরা এই নদী থেকে মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন।
তবে এখন নদীটি সম্পূর্ণভাবে দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। একটি সিন্ডিকেট প্রতি বছর ব্যক্তিগতভাবে ইজারা দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে। শুধু তাই নয়, কোনো জেলে মাছ ধরতে গেলে তাদের ওপর হামলা করা হয় এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় ১৫ বছর ধরে বানিয়াচং উপজেলার ২ নম্বর ইউনিয়নের সৈদ্যাটুলা মহল্লার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে নদীটি অবৈধভাবে ভোগদখল করে আসছেন। তাদের কারণে দরিদ্র জেলেরা এখন নদীতে নামতে ভয় পান। কেউ মাছ ধরতে গেলে তাকে মারধর করা হয় এবং তার মাছ ধরার জাল ও সরঞ্জাম কেড়ে নেওয়া হয়। এলাকাবাসী এই অবৈধ দখল থেকে নদীটিকে মুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
নদী পরিদর্শনের সময় বর্তমান ইজারাদার আনোয়ার মিয়া জানান, তিনি এ বছর নোয়াগড় গ্রামের মাসুক মিয়ার কাছ থেকে মৌখিকভাবে নদীটি সাব-ইজারা নিয়েছেন। তিনি আরও জানান, সৈদ্যাটুলা গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া, সুহেল মিয়া এবং মাতাপুর মহল্লার রহিম বক্সসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এই নদীটি ইজারা দিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে দখলদার আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া বলেন, এটি কোনো নদী নয়, এটি নদীর একটি শাখা। তিনি দাবি করেন, তারা সাতজন মিলে এটি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করছেন। তিনি আরও জানান, সরকার পক্ষের সঙ্গে মামলা করে তারা রায় পেয়েছেন। সরকারি রেকর্ডে নদী হিসেবে উল্লেখ থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রেকর্ড সংশোধনের জন্য মামলা চলমান রয়েছে।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিবিড় রঞ্জন তালুকদার জানান, এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত), বদলপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নদী বা সরকারি জায়গায় অবৈধ দখলের প্রমাণ পাওয়া গেলে দখলদারদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।