সিলেট ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
News Title :
‎বানিয়াচংয়ে গভীর রাতে প্রবাসীর বাড়ি দখল, নিরীহ পরিবার জিম্মি! ‎নবীগঞ্জে চোরাই মোবাইল উদ্ধারে গিয়ে পুলিশের ওপর হামলা: ৫ জন আটক, ৬ পুলিশ সদস্য আহত‎ ‎নবীগঞ্জে আত্মহত্যা ও দাঙ্গা প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসনের সচেতনতামূলক সভা‎ সিলেটের জৈন্তাপুরে পালিত হলো জাতীয় কন্যা শিশু দিবস ‎ধনবাড়ীতে ওলামা দলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত: আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত ‎সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় গরু-মহিষের চোরাচালান আটক: বিজিবি’র সাফল্য ‎সখীপুরে মুসলিম জুয়েলার্সকে ১ লাখ টাকা জরিমানা ‎ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে হবিগঞ্জে আইনজীবীদের মানববন্ধন ‎টাঙ্গাইল সদরে চাড়াবাড়ি এস ডি এস ব্রীজের পশ্চিম অংশ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন মৃতের স্ত্রী হত্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিক পরিবারকে হয়রানি, তদন্ত প্রতিবেদনের উপর তিনবার নারাজি ॥

বানিয়াচং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়: ঐতিহ্যবাহী  প্রতিষ্ঠানের সংকট চরমে

বানিয়াচং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক।

এক সময় হবিগঞ্জ জেলার সেরা বেসরকারি স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল বানিয়াচং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়।
বানিয়াচংয়ে দুটি সরকারি স্কুল থাকা সত্ত্বেও অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে ছিল এই প্রতিষ্ঠান। এখানে সুযোগ পেতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ছিল একমাত্র উপায়। কিন্তু বর্তমানে, নানা সমস্যা ও অচলাবস্থায় জর্জরিত হয়ে স্কুলটি তার সেই গৌরব হারাচ্ছে।

সংকটের শুরু ও অভিযোগ

২০২৪ সালে সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই স্কুলটিতে নানা সমস্যা শুরু হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পারভীন খানম, সহকারী প্রধান শিক্ষক শিরিনা আক্তার এবং সহকারী শিক্ষক নানু মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ আছে যে, সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হায়দারুজ্জামান ধন মিয়ার আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় এই শিক্ষকরা স্কুলে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠে।
সরকার পরিবর্তনের পর তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয় এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুলে আসা বন্ধ করার দাবিতে একজোট হন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠান এবং সিনিয়র শিক্ষক গোলাম রাব্বানীকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

দুর্নীতির অভিযোগ ও শিক্ষা অধিদপ্তরের পদক্ষেপ
অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাওছার আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি নোটিশে (১৮/৫/২০২৫ তারিখ) তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়, তারা উপবৃত্তির টাকা, এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফি এবং ইউনিক আইডির জন্য টাকা আদায় করেছেন। এমনকি, তারা অ্যাসাইনমেন্ট বাবদও টাকা নিয়েছেন এবং অন্য শিক্ষকদের হেনস্তা করেছেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে এবং সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে। তবে সেই নোটিশের জবাবে কী হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে অভিযোগ উঠেছে?
এছাড়াও কয়েক ডজন অভিযোগের ব্যাপারে কি হয়েছে তারও কোন খবর নেই কারও কাছে?

উত্তপ্ত পরিস্থিতি ও বিক্ষোভ

দীর্ঘদিন ছুটিতে থাকার পর অভিযুক্ত তিন শিক্ষক গত মাসে আবার স্কুলে ফিরে আসেন। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ শুরু হয়।
অভিযোগ ওঠে যে, অভিযুক্ত শিক্ষকদের সমর্থকরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়, যার ফলে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ হস্তক্ষেপ করেন এবং উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান।

অভিযোগ উঠেছে যে, অভিযুক্ত শিক্ষকরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বানিয়াচং শহীদ মিনারের সামনে এনে তাদের পক্ষে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করিয়েছেন, যা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তোলে।

অ্যাডহক কমিটি ও তার ভূমিকা

স্কুলের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অভিভাবক পরিচালনা কমিটি ভেঙে দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম সাথীকে সভাপতি করে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ আছে যে, অ্যাডহক কমিটির সদস্য এস এম খোকন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সমস্যা বেড়েছে। অনেকে অভিযোগ করেন যে, তিনিই ছুটিতে থাকা শিক্ষকদের ফিরিয়ে এনেছেন, যা বর্তমান উত্তেজনার মূল কারণ!

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা বেগম সাথী সে সময় গণমাধ্যমকে জানান যে, তিনি শিক্ষকদের ফিরে আসার খবর জানতেন না। তবে সচেতন মহল ও অভিভাবকরা এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, কারণ এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একজন সভাপতির অবগত না থাকাটা অস্বাভাবিক।

স্থানীয় পঞ্চায়েতের হস্তক্ষেপ

স্কুলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে গত শনিবার সৈর্দাটুলা সাত মহল্লার সর্দার অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে একটি সর্বদলীয় পঞ্চায়েত অনুষ্ঠিত হয়। পঞ্চায়েত থেকে অ্যাডহক কমিটির সদস্য এস এম খোকনকে ডাকা হলেও তিনি উপস্থিত হননি।

পঞ্চায়েত শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে, স্কুলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত তিন শিক্ষক এবং অ্যাডহক কমিটির সদস্য এস এম খোকন কে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়ার আগ পর্যন্ত স্কুলে আসতে পারবেন না বলে জানা গেছে।

সৈর্দাটুলা ৭ মহল্লার সর্দার অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান জানান, অ্যাডহক কমিটির কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, তাই উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়াতে এই পাঁচজনকে স্কুলে আসতে বারণ করা হয়েছে। তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের কাছে থাকা স্কুলের সিসি ক্যামেরার পাসওয়ার্ড ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানীর কাছে হস্তান্তর করতে।

তিনি বলেন, আমরা এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অ্যাডহক কমিটির সভাপতির সাথে আমরা সরাসরি কথা বলে সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করব। আমরা সব শিক্ষক অনুরোধ করেছি সবাই যেন স্কুলের পরিবেশ ঠিক রেখে পাঠদান চালিয়ে যান। তবে কিছু শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তারমধ্যে শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন মুকুলের বিরুদ্ধেও দলবাজি সহ নানান অভিযোগ আছে বলে স্কুল কতৃপক্ষ জানান।


তিনিও নাকি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নানান ভাবে উস্কানি দিয়ে আসছেন বলে বেশ কয়জন অভিভাবক সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন।

স্কুলের এই অচলাবস্থা নিরসনে স্থানীয় প্রশাসন, অ্যাডহক কমিটি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা চান, এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি তার পুরনো গৌরব ফিরে পাক এবং সব জটিলতা দূর করে আবারও আলো ছড়াক প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টি।

আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন খানমনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,
আমি এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। দীর্ঘদিন ছুটিতে ছিলাম। আমার অনুপস্থিতিতে এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট খুবই খারাপ হয়েছে। এসব দেখে আমি আর বসে থাকতে পারিনাই, পরে কতৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে আমি সহ ৩ জন শিক্ষক স্কুলে যোগদান করি, এবং নিয়মিত স্কুল পরিচালনা করছি। এর মাঝে দুইদিন মবের শিকারও হয়েছি আমরা!
কিন্তু গত শনিবার এডভোকেট নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে এলাকাবাসী স্কুলে গিয়ে আমরা ৫ জন কে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়ার আগ পর্যন্ত স্কুলে না যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। তখন আমরা স্কুলে ছিলাম না বলে তিনি জানান।
পরে সিনিয়র শিক্ষক গোলাম রাব্বানী তাদের কে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এলাকাবাসীর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।
পারভীন খানম আর বলেন, আমি তো এখনও প্রধান শিক্ষক পদে আছি, এলাকাবাসী কোন আইনে আমাদের স্কুলে আসতে নিষেধ তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, এডভোকেট নজরুল ইসলাম খান তো আইনজীবী, উনার আইন মত কথা বলা উচিৎ ছিল।
কতদিন অপেক্ষা করবেন অপর প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আমি কতৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিব।

আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা বেগম সাথী সাথে এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে উনার সরকারি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি,
পাশাপাশি হোয়াইট অ্যাপে বার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া দেননি তিনি।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

‎বানিয়াচংয়ে গভীর রাতে প্রবাসীর বাড়ি দখল, নিরীহ পরিবার জিম্মি!

বানিয়াচং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়: ঐতিহ্যবাহী  প্রতিষ্ঠানের সংকট চরমে

সময় ০১:৪৩:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বানিয়াচং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক।

এক সময় হবিগঞ্জ জেলার সেরা বেসরকারি স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল বানিয়াচং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়।
বানিয়াচংয়ে দুটি সরকারি স্কুল থাকা সত্ত্বেও অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে ছিল এই প্রতিষ্ঠান। এখানে সুযোগ পেতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ছিল একমাত্র উপায়। কিন্তু বর্তমানে, নানা সমস্যা ও অচলাবস্থায় জর্জরিত হয়ে স্কুলটি তার সেই গৌরব হারাচ্ছে।

সংকটের শুরু ও অভিযোগ

২০২৪ সালে সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই স্কুলটিতে নানা সমস্যা শুরু হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পারভীন খানম, সহকারী প্রধান শিক্ষক শিরিনা আক্তার এবং সহকারী শিক্ষক নানু মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ আছে যে, সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হায়দারুজ্জামান ধন মিয়ার আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় এই শিক্ষকরা স্কুলে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠে।
সরকার পরিবর্তনের পর তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয় এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুলে আসা বন্ধ করার দাবিতে একজোট হন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠান এবং সিনিয়র শিক্ষক গোলাম রাব্বানীকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

দুর্নীতির অভিযোগ ও শিক্ষা অধিদপ্তরের পদক্ষেপ
অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাওছার আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি নোটিশে (১৮/৫/২০২৫ তারিখ) তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়, তারা উপবৃত্তির টাকা, এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফি এবং ইউনিক আইডির জন্য টাকা আদায় করেছেন। এমনকি, তারা অ্যাসাইনমেন্ট বাবদও টাকা নিয়েছেন এবং অন্য শিক্ষকদের হেনস্তা করেছেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে এবং সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে। তবে সেই নোটিশের জবাবে কী হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে অভিযোগ উঠেছে?
এছাড়াও কয়েক ডজন অভিযোগের ব্যাপারে কি হয়েছে তারও কোন খবর নেই কারও কাছে?

উত্তপ্ত পরিস্থিতি ও বিক্ষোভ

দীর্ঘদিন ছুটিতে থাকার পর অভিযুক্ত তিন শিক্ষক গত মাসে আবার স্কুলে ফিরে আসেন। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ শুরু হয়।
অভিযোগ ওঠে যে, অভিযুক্ত শিক্ষকদের সমর্থকরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়, যার ফলে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ হস্তক্ষেপ করেন এবং উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান।

অভিযোগ উঠেছে যে, অভিযুক্ত শিক্ষকরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বানিয়াচং শহীদ মিনারের সামনে এনে তাদের পক্ষে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করিয়েছেন, যা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তোলে।

অ্যাডহক কমিটি ও তার ভূমিকা

স্কুলের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অভিভাবক পরিচালনা কমিটি ভেঙে দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম সাথীকে সভাপতি করে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ আছে যে, অ্যাডহক কমিটির সদস্য এস এম খোকন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সমস্যা বেড়েছে। অনেকে অভিযোগ করেন যে, তিনিই ছুটিতে থাকা শিক্ষকদের ফিরিয়ে এনেছেন, যা বর্তমান উত্তেজনার মূল কারণ!

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা বেগম সাথী সে সময় গণমাধ্যমকে জানান যে, তিনি শিক্ষকদের ফিরে আসার খবর জানতেন না। তবে সচেতন মহল ও অভিভাবকরা এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, কারণ এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একজন সভাপতির অবগত না থাকাটা অস্বাভাবিক।

স্থানীয় পঞ্চায়েতের হস্তক্ষেপ

স্কুলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে গত শনিবার সৈর্দাটুলা সাত মহল্লার সর্দার অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে একটি সর্বদলীয় পঞ্চায়েত অনুষ্ঠিত হয়। পঞ্চায়েত থেকে অ্যাডহক কমিটির সদস্য এস এম খোকনকে ডাকা হলেও তিনি উপস্থিত হননি।

পঞ্চায়েত শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে, স্কুলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত তিন শিক্ষক এবং অ্যাডহক কমিটির সদস্য এস এম খোকন কে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়ার আগ পর্যন্ত স্কুলে আসতে পারবেন না বলে জানা গেছে।

সৈর্দাটুলা ৭ মহল্লার সর্দার অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান জানান, অ্যাডহক কমিটির কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, তাই উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়াতে এই পাঁচজনকে স্কুলে আসতে বারণ করা হয়েছে। তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের কাছে থাকা স্কুলের সিসি ক্যামেরার পাসওয়ার্ড ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানীর কাছে হস্তান্তর করতে।

তিনি বলেন, আমরা এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অ্যাডহক কমিটির সভাপতির সাথে আমরা সরাসরি কথা বলে সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করব। আমরা সব শিক্ষক অনুরোধ করেছি সবাই যেন স্কুলের পরিবেশ ঠিক রেখে পাঠদান চালিয়ে যান। তবে কিছু শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তারমধ্যে শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন মুকুলের বিরুদ্ধেও দলবাজি সহ নানান অভিযোগ আছে বলে স্কুল কতৃপক্ষ জানান।


তিনিও নাকি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নানান ভাবে উস্কানি দিয়ে আসছেন বলে বেশ কয়জন অভিভাবক সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন।

স্কুলের এই অচলাবস্থা নিরসনে স্থানীয় প্রশাসন, অ্যাডহক কমিটি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা চান, এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি তার পুরনো গৌরব ফিরে পাক এবং সব জটিলতা দূর করে আবারও আলো ছড়াক প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টি।

আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন খানমনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,
আমি এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। দীর্ঘদিন ছুটিতে ছিলাম। আমার অনুপস্থিতিতে এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট খুবই খারাপ হয়েছে। এসব দেখে আমি আর বসে থাকতে পারিনাই, পরে কতৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে আমি সহ ৩ জন শিক্ষক স্কুলে যোগদান করি, এবং নিয়মিত স্কুল পরিচালনা করছি। এর মাঝে দুইদিন মবের শিকারও হয়েছি আমরা!
কিন্তু গত শনিবার এডভোকেট নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে এলাকাবাসী স্কুলে গিয়ে আমরা ৫ জন কে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়ার আগ পর্যন্ত স্কুলে না যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। তখন আমরা স্কুলে ছিলাম না বলে তিনি জানান।
পরে সিনিয়র শিক্ষক গোলাম রাব্বানী তাদের কে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এলাকাবাসীর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।
পারভীন খানম আর বলেন, আমি তো এখনও প্রধান শিক্ষক পদে আছি, এলাকাবাসী কোন আইনে আমাদের স্কুলে আসতে নিষেধ তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, এডভোকেট নজরুল ইসলাম খান তো আইনজীবী, উনার আইন মত কথা বলা উচিৎ ছিল।
কতদিন অপেক্ষা করবেন অপর প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আমি কতৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিব।

আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা বেগম সাথী সাথে এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে উনার সরকারি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি,
পাশাপাশি হোয়াইট অ্যাপে বার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া দেননি তিনি।