
হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলায় সরকারি খালের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে ভবন ও দোকানপাট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উপজেলার করাব থেকে বুল্লা বাজার হয়ে বামৈ পর্যন্ত বিস্তৃত ১ নং খাস খতিয়ানের ভূমি সড়কের পাশের সরকারি খালগুলো দখল করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এর ফলে একদিকে যেমন পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, অন্যদিকে সরকারি সম্পত্তিও বেহাত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
লাখাই উপজেলার ডিসি ১ নং খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত এই খালগুলো একসময় এলাকার পানি নিষ্কাশনের প্রধান পথ ছিল। কিন্তু স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, বর্তমানে এসব খালের অনেক অংশ ভরাট করে পাকা দালান, দোকানপাট এবং অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। দখলদাররা এসব অবৈধ স্থাপনা থেকে বছরের পর বছর ধরে মোটা অঙ্কের টাকা ভাড়া হিসেবে আদায় করছে।
ভুক্তভোগী স্থানীয়রা জানান, সরকারি সম্পত্তি দখল করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না! তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই দখল বাণিজ্য চললেও সরকারি পক্ষ থেকে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বুল্লা বাজার থেকে বামৈ পর্যন্ত ৩৯৪১, ৩৮৪৮, ৬৭৬৯ দাগ নম্বরসহ আরও একাধিক সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জমি অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় সচেতন মহল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছেন, যেখানে সরকারি খাল বা জলমহল দখল করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, সেখানে কেন প্রশাসন নীরব? ভূমি আইন অনুযায়ী, সরকারি সম্পত্তি দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক।
একটি বহুল আলোচিত বিষয় হলো, হবিগঞ্জ-লাখাই-নাসিরনগর-সরাইল আঞ্চলিক মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করতে অনেক জায়গা অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে। সুশীল সমাজের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, যখন সরকারের ১ নং খতিয়ানের এত জায়গা অবৈধ দখলে, তখন কেন নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে? এ বিষয়টি কি প্রমাণ করে যে ভূমি দখলদাররা প্রশাসনের ওপর জয়ী হচ্ছে?
এ বিষয়ে লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাস অনুপ বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। বিষয়টি জেনে তারপর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।” তার এই মন্তব্যে স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজ দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাদের দাবি, অবিলম্বে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং দখলকৃত সরকারি সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করে তা জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হোক। তা না হলে সরকারি সম্পত্তি বেহাত হওয়ার এই ধারা চলতেই থাকবে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।