
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের ছাদ দুইবার ধসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে নির্মাণকাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএসএল এন্ড আলী (জেভি)-এর বিরুদ্ধে।
নিম্নমানের কাজ ও নির্মাণ ত্রুটি
বানিয়াচং মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ এখনও শেষ হয়নি, অথচ এর মধ্যেই দুই দফা ছাদ ধসে পড়েছে। এই ঘটনা প্রকল্পের গুণগত মান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করছে, যা বারবার এমন দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে।
এমনকি একজন নির্মাণ শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন যে, তার দাবী এই জায়গা না-কি (দোষী জায়গায়) অর্থাৎ এখানে নাকি খারাপ কিছু আছে! এরজন্য না-কি ঢালাই ঠিকছে না! এটা একটা গাঁজাখুরি গল্প ছাড়া আর কিছু নয়।
যদি এমন হত তা হলে উত্তাল পদ্মা ও যুমান নদীতে বাংলাদেশের দীর্ঘ সেতু কিভাবে তৈরি হল? কিন্তু আসল কথা হল, অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে কাজ ও নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রীর ফলে বারবার এমন দূর্ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে বারবার দূর্ঘটনা ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবী।

পরিবেশ ও আইন লঙ্ঘন করে পুকুরের উপর নির্মাণের ফলে মডেল মসজিদটি হুমকির মুখে আছে। পুকুরের উপর নির্মাণ করা নিয়েও স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ করা হলেও, প্রশাসনের সন্নিকটে কিভাবে একটি পুকুরের মাঝখানে এই স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে এই প্রশ্ন সবার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। পরিবেশবাদী ও সাধারণ মানুষ এটিকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করছেন। যদি-ও মসজিদ টি খোলামেলা জায়গায় করা হত তা হলে আর দৃষ্টিনন্দন দেখা যেত। মুসল্লিগণ আরাম আয়াসে ইবাদত পালন করতে পারতেন। বাংলাদেশের অধিকাংশ মডেল মসজিদ খোলামেলা জায়গায় দৃষ্টিনন্দন ভাবে স্থাপিত হয়েছে বা হচ্ছে।
এই নির্মাণের ত্রুটির ফলে মসজিদে আগত সম্মানিত মুসল্লিগণ ভবিষ্যতে ঝুঁকির মধ্যে থাকার সম্ভবনা খুবই বেশি। তাই এখনও সময় আছে প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে বাকী কাজগুলো করার। না হলে সামনে খুবই বিপদ হওয়ার আশংকা আছে।
কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা
বারবার ছাদ ধসে পড়ার মতো গুরুতর ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করছে, যার ফলস্বরূপ বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে।
যদিও বলা হচ্ছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মসজিদের কাজ শেষ হবে, কিন্তু কাজের ধীরগতি দেখে স্থানীয়রা মনে করছেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না।
স্থানীয়দের দাবি, এই নির্মাণকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে দ্রুত তদন্ত হওয়া উচিত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর বানিয়াচং শাখার সভাপতি দেওয়ান শোয়েব রাজা বলেন, “মডেল মসজিদের কাজে দুর্নীতি ও সাইট ইঞ্জিনিয়ারের গাফিলতি আছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহারের ফলে বারবার এমন দুর্ঘটনা ঘটছে।” তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন, “বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে জলাশয়ের উপর কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণ করা আইনসিদ্ধ নয়। এখানে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আছে। একটি জলাশয় পরিবেশের ভারসাম্য এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরও বলেন, পুকুরের উপর এই মসজিদ নির্মাণ এবং বারবার ছাদ ধসে পড়ার কারণে ভবিষ্যতে মুসল্লিরা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন।
সাবেক উপসচিব ড. শেখ ফজলে এলাহি বলেন, বানিয়াচংয়ে মডেল মসজিদ হওয়াটা ভালো, তবে এটি পুকুরের মধ্যে করা জরুরি ছিল না। তিনি বলেন, যেসব এলাকায় মসজিদের প্রয়োজন, সেখানে এটি নির্মাণ করা হলে মুসল্লিরা উপকৃত হতেন।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা বেগম সাথী-এর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন ছাদ আগেও ধসে পড়ে ছিল আমি ডিসি স্যার কে জানিয়েছি গতকাল দ্বিতীয় দফায় ছাদ ধ্বসে পড়ার খবর স্যার কে জানিয়েছি। অনিয়মের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন এই কাজের তদারকি করছেন পিডব্লিউও। এটা তারা দেখভাল করবেন ।
অপর প্রশ্নে জলাশয়ের মাঝে স্থাপনা আইনসিদ্ধ কি না? তিনি জানান, এটা তো আগের কতৃপক্ষ আইন মেনে করেছেন। এটা আমার মন্তব্যের মধ্যে পড়ে না।