
সিলেট বিভাগের ভূমি মালিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের প্রেস, ঢাকায় স্থানান্তরের পায়তারা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সিলেটজুড়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে সিলেটে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের অধীনে এই মিনি প্রেসটি সিলেট জোনাল অফিসে স্থাপন করা হয়েছিল। স্থাপনের পর থেকেই প্রেসটি সুনামের সঙ্গে সিলেটের, ৪ জেলার ভূমি মালিকদের জন্য দ্রুত খতিয়ান ছাপার কাজ করে আসছে। এর ফলে এখানকার প্রবাসীরাও দ্রুত সেবা পাচ্ছিলেন, যা ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সহায়ক ছিল। এই প্রেসের কারনেই সিলেট জরিপ কাজ দ্রুত সমাপ্তির পথে।
১৯৮৭-৮৮ সিলেট জোনে জরিপ কাজ শুরু হয়। ধীরগতিতে চলা জরিপ কাজ এই সেটেলমেন্ট প্রেসের কারনে দ্রুততার সাথে কাজ সমাপ্তি পথে।
এই প্রেস নিয়ে অতীতেও নানা যড়যন্ত্র চলেছিল, সেটা শান্তিপ্রিয় সিলেট বাসী রুখে দিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, সাবেক জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার কাজী মাহবুব উর রহমান অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে একটি লিখিত পত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে প্রেসটি ঢাকায় স্থানান্তরের প্রস্তাব দেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তিনি না-কি সিলেটে প্রেসের প্রয়োজন নেই এমন মন্তব্য করে ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠান! তার এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে সিলেট বাসী ক্ষুব্ধ।
যদিও তাকে তার নানাবিধ কর্মকাণ্ডের কারনে ইতোমধ্যে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে, তবুও তার এই প্রস্তাবের কারণে সিলেটবাসী এখন চরম উদ্বেগে রয়েছেন।
যদি এই প্রেসটি সিলেট থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়, তবে ভূমি মালিকদের ভোগান্তি বহুগুণে বাড়বে। বর্তমানে সিলেটে খতিয়ান সংশোধনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয়। প্রেস সিলেটে থাকায় ভূমি মালিকরা সংশোধিত খতিয়ান কয়েকদিনের মধ্যেই হাতে পেয়ে যান। কিন্তু প্রেসটি ঢাকায় চলে গেলে এই সেবা পেতে মাসের পর মাস লেগে যাবে।
সিলেট সদর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কিছু মৌজা, যেমন সিলেট মিউনিসিপ্যালিটি মৌজা, যেখানে হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার শরিফ ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিস আদালত অবস্থিত, সেগুলোর খতিয়ান ছাপার কাজ এখনো বাকি আছে। একটি রিট মামলার কারণে প্রায় ১৫ হাজার ভূমি মালিকের সম্পত্তি আটকে আছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসটি স্থানান্তরিত হলে এই কাজগুলো আরও বিলম্বিত হবে।
ভূমি মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কোনোভাবেই এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজি নন। ফয়েজ আহমেদ নামে একজন ভূমি মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের ছাপা খতিয়ান না পাওয়া পর্যন্ত সিলেট থেকে প্রেস ঢাকা নিতে দেওয়া হবে না।” তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যদি এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। মিউনিসিপালিটি মৌজার বাসিন্দা জনাব কয়েস আহমদে ক্ষোভের সাথে তিনি বলেন, কোন মতে আমরা সিলেট থেকে এই প্রেস ঢাকায় স্থানান্তরে হতে দিব না। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।
সিলেট জজ কোর্টের অতিরিক্ত জিপি অ্যাডভোকেট তাজ রীহান জামানও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, এমন হঠকারিতার কারণে ভূমি মালিকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
সিলেট থেকে প্রেস ঢাকায় নেয়ার বিষয়টি সিলেটের জনপ্রিয় সাবেক মেয়র জনাব আরিফুল হক চৌধুরী এবং বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জনাব খন্দকার আবদুল মুক্তাদির উনাকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে বলে জানাগেছে।
প্রেস ঢাকায় স্থানান্তরে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামী বুধবার সকাল ১০টায় সিলেট বাসীর ব্যানারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একটি মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। এই মানববন্ধনে সর্বস্তরের ভূমি মালিকদের অংশ গ্রহণ বৃহত্তর আন্দোলনের সূচনা হবে বলে স্থানীয় ভূমি মালিকগণএই প্রতিবেদকে জানান।
সিলেটের শান্তিপ্রিয় ভূমি মালিকগণ এই মানববন্ধনে উপস্থিত থাকার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।