
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার রোপা আমন মৌসুম ঘিরে মাঠ পর্যায়ে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের আমলের নিয়োগ পাওয়া ডিলারদের বিরুদ্ধে।
সার সংকট সৃষ্টির নেপথ্যে কাজ করছেন এই সিন্ডিকেট। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, এসব ডিলারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।
এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বলয় ভাঙতে সরকার মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। ডিলারশিপ বাতিল এবং একটি নতুন নীতিমালা তৈরির কাজও করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর সরকার বদলের এক বছর হতে চললেও সারের বাজারের নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া ডিলারদের হাতেই রয়ে গেছে। এসব ডিলারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও তাদের লাইসেন্সের বিপরীতে সার বরাদ্দ থেমে নেই। কোনো কোনো আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে সারের লাইসেন্স আছে! হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই এ চক্র কৃত্রিম সার সংকট তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পতন হলেও লাখাইয়ে অনেক আওয়ামী লীগের নেতা বাসারের ডিলার দাপটের সঙ্গে সার বিজ কৃত্রিম শংকট তৈরি করে দাপটের সাথে তাদের ব্যবসা চালাচ্ছেন। প্রকাশ্যে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায় না বলে অভিযোগ আছে।
কৃষকদের অভিযোগ, যে সার সরকারি দরে ডিলারদের নিকট থেকে পাওয়ার কথা, তা মিলছে না। অথচ লাখাই উপজেলায় দোকানে দোকানে সারের অভাব নেই বলেও কৃষকরা অভিযোগ করেছেন।
উপজেলার লাখাই বাজারে দুই সারের ডিলার তাদের দোকানে সার নেই। ডিলার সুনিল দেবনাথ ও প্রদীব রায় নামে ডিলার থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের ব্যবসায়িক পার্টনার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই নেতা। খুচরা দোকানির কাছ থেকে সার কিনতে গেলে দিতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এখানে বড় সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে অভিযোগ আছে। তাদের চক্রের ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক।
ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়ার তিন ধরনের সার উপজেলার সরকারি ডিলার পয়েন্ট নেই । অথচ এ সারই খুচরা পর্যায়ের ডিলারদের কাছে মিলছে বেশি দামে। লাখাই উপজেলার বিসিআইসি ডিলারদের বিরুদ্ধে ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি এবং সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। লাখাই বাজারে বিসিআইসির ডিলারের বিরুদ্ধে সার বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ডিলারশীপ সুনিল দেবনাথ, প্রদীপ কুমার রায়ের নামে থাকলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি যতিশ পাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ প্রিয়তোষ দাস তাদের ব্যবসায়িক পার্টনার । তারা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সারের ডিলার আছেন লাখাই উপজেলায় বিএডিসি অনুমোদিত ২০ জন ডিলার আছে । এসব ডিলার অধিকাংশই আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পেয়েছেন বলে সবাই অভিযোগ আছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিএডিসি নন-ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারের জোগান দিয়ে থাকে। বিএডিসির পাশাপাশি নন-ইউরিয়া সার আসে বেসরকারি আমদানিকারকের মাধ্যমে। স্থানীয় উৎপাদন ও আমদানির মাধ্যমে ইউরিয়ার জোগান দেয় বিসিআইসি। এসব আওয়ামী লীগ নেতার তাদের ডিলারশিপের অনুকুলে সার কেনাবেচা ঠিকই চলছে। অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন জেলায় ইউনিয়নে নির্ধারিত ডিলার থাকলেও সেখান থেকে সার তোলা যাচ্ছে না। ডিলাররা সার স্থানীয়ভাবে দোকানে রাখেন না, বরং সার কারখানা থেকে ক্রয় করে সেখান থেকে অন্য জেলার ব্যবসায়ীদের নিকটে তারা বিক্রি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে লাখাইয়ে কৃষকদের অতিরিক্ত দামে খোলা বাজার থেকে সার কিনতে হচ্ছে।
বর্তমানে বিএডিসি ও বিসিআইসি আলাদা সংস্থা হলেও তারা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বিএডিসি শুধু নন-ইউরিয়া সার বরাদ্দ দেয়, আর বিসিআইসি দেয় শুধু ইউরিয়া। দুই সংস্থার ডিলারদের আলাদা বরাদ্দ থাকায় কৃষককে দুই দোকানে ঘুরতে হয়। আবার দুই সংস্থাই ডিলার নিয়োগ করে। কৃষি বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুধু বিএডিসির হাতেই ডিলার নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়া উচিত।
লাখাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাদুল ইসলাম সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, লাখাই ইউনিয়নের সারের ডিলার সুনীল দেবনাথের সঙ্গে আলাপ হয়েছে তারা এখন পর্যন্ত কোন সার তুলে নাই তবে সার তারা বামৈ ইউনিয়নে একটি গুদামে তোলবে বলে আমাকে জানিয়েছে আমি সবকিছু দেখেই সার বিতরণের অনুমতি দেব।
গণমাধ্যমে সাথে আলাপ কালে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান মনে করেন, সারভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থাপনা টিকিয়ে রাখতে হলে রাজনৈতিক ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিএডিসি-বিসিআইসির দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ বাদ দিয়ে ডিলারশিপ দিতে হবে সমন্বিত নীতিমালায়। প্রতিটি লেনদেনে ভাউচার বাধ্যতামূলক করা এবং ডিজিটাল ট্র্যাকিং চালু করতে হবে।
গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এখন থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় ডিলারশিপ দেওয়া হবে না। সারের লাইসেন্স নিয়ে আগে যারা ঝামেলা করেছে, তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। এখান নতুন করে লাইসেন্স দেওয়া হবে। এ জন্য শিগগিরই একটি নীতিমালা করে যোগ্যদের বিবেচনায় নেওয়া হবে। আগামী নভেম্বর পর্যন্ত সার সংকট হবে না