
বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাহিত্যিক, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক যতীন সরকার প্রয়াত হয়েছেন। বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫ তারিখে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দপাড়া গ্রামে যতীন সরকার জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘ ৪২ বছরের বেশি সময় ধরে অধ্যাপনা করেছেন। ২০০২ সালে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি নিজ জেলা নেত্রকোনায় ফিরে যান এবং আমৃত্যু সেখানেই বসবাস করেছেন।
যতীন সরকার শুধু একজন শিক্ষক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন মননশীল সাহিত্যিক, বাম রাজনীতির সমর্থক এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী। তিনি দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার বিশেষ ভূমিকা ছিল।
যতীন সরকারের লেখালেখির জীবন ছাত্রাবস্থায় শুরু হলেও তার প্রথম বই ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’ প্রকাশিত হয় ৫০ বছর বয়সে, ১৯৮৫ সালে। এরপর তিনি একে একে অর্ধশতেরও বেশি বই রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হলো:
* বাংলাদেশের কবি গান
* বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য
* সংস্কৃতির সংগ্রাম
* পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন
* দ্বিজাতিতত্ত্ব নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞান চেতনা
* ভাবনার মুক্তবাতায়ন
তিনি বহু গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন এবং ‘সমাজ অর্থনীতি ও রাষ্ট্র’ নামে একটি তত্ত্বমূলক ত্রৈমাসিক পত্রিকাও সম্পাদনা করতেন।
সাহিত্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি নানা সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে:
* স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১০)
* বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭)
* প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ পুরস্কার (২০০৫, পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন গ্রন্থের জন্য)
* ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক
* খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার
যতীন সরকার স্ত্রী কানন সরকার, ছেলে সুমন সরকার ও মেয়ে সুদীপ্তা সরকার-সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও স্বজন রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে নেত্রকোনা উদীচী, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তার চলে যাওয়ায় দেশের সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
অনলাইন সিলেট পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা।