
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ঠিকাদার সুজাত মিয়াকে হত্যার দায়ে তার প্রতিবেশী শ্রমিক গিয়াসউদ্দিনকে দীর্ঘ আড়াই বছর পর গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে গিয়াসউদ্দিন স্বীকার করেছেন যে, ঠিকাদারের সঙ্গে তার স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি। এতদিন পাগল সেজে আত্মগোপনে ছিলেন গিয়াসউদ্দিন।
২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টার দিকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় ভাড়া বাসায় ঠিকাদার সুজাত মিয়াকে দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পাঁচ দিন পর ১৯ জানুয়ারি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত সুজাত মিয়া (২৬) হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার বানেশ্বর বিশ্বাসের পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। গ্রেফতারকৃত গিয়াসউদ্দিনও একই গ্রামের বাসিন্দা।
এই ঘটনায় সুজাতের স্ত্রী নার্গিস বেগম বাদী হয়ে গিয়াসউদ্দিনসহ মোট চারজনের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে গিয়াসউদ্দিনকে পলাতক দেখিয়ে বাকি আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র জমা দেয়। কিন্তু বাদী নার্গিস বেগম এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দিলে আদালত মামলাটি পিবিআই সিলেট জেলাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।
পিবিআই তদন্তে জানতে পারে, ঘটনার পর থেকে গিয়াসউদ্দিন চুল-দাড়ি বড় করে পাগল সেজে দেশের বিভিন্ন মাজার এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি কোনো মোবাইল ফোনও ব্যবহার করতেন না।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই গত ৯ আগস্ট সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার মনরতল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সময় গিয়াসউদ্দিনের পরনে ছিল ছেঁড়া পাঞ্জাবি এবং তার আচার-আচরণ দেখে তাকে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন মনে হলেও জিজ্ঞাসাবাদের পর তার সুস্থতার বিষয়টি নিশ্চিত হয় পিবিআই। পরে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে গিয়াসউদ্দিন জানান, ঠিকাদার সুজাতের অধীনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সময় তার স্ত্রী সুফিয়া বেগমের সঙ্গে সুজাতের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সুজাত তাদের সম্পর্কের কিছু ছবিও তুলে রেখেছিল। এই ছবিগুলো গিয়াসউদ্দিনকে দেখিয়ে সুজাত তাদের অবৈধ সম্পর্কের কথা জানালে গিয়াসউদ্দিন উত্তেজিত হয়ে ছবিগুলো মুছে ফেলতে বলেন।
এ ঘটনায় গিয়াসউদ্দিন কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরে যেতে চাইলে সুজাত তাকে ৪ লাখ টাকা চুরির মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। এই ভয়ে গিয়াসউদ্দিন ৮ দিন ধরে আটকে ছিলেন এবং সুজাতের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। এসব ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়েই তিনি সুজাতকে কুপিয়ে হত্যা করেন বলে স্বীকার করেন। গ্রেফতার এড়াতে তিনি এতদিন পাগল সেজে লুকিয়ে ছিলেন।