
স্পিনার মেহেদি হাসান ও ওপেনার তানজিদ হাসানের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ।
গতকাল সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিলো টাইগাররা। এর আগে প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেটে জয়লাভ করে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ৮৩ রানে জয়ী হয়।
শ্রীলঙ্কা সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-০ ব্যবধানে এবং তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হারের পর, টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে সফর শেষ করলো লিটন দাসের দল।
শ্রীলঙ্কার ইনিংস: মেহেদির ঘূর্ণি জাদু
কলম্বোর আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বাংলাদেশের বোলারদের তোপের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কা। পেসার শরিফুল ইসলাম প্রথম ওভারের শেষ বলে কুশাল মেন্ডিসকে (৬) সাজঘরে ফেরান। এরপর বল হাতে নিয়ে চমক দেখান সিরিজে প্রথম সুযোগ পাওয়া স্পিনার মাহেদি হাসান। তিনি তিন নম্বরে নামা কুশাল পেরেরাকে গোল্ডেন ডাকের শিকার করেন।
পঞ্চম ওভারে মেহেদি তার তৃতীয় শিকার ধরেন, দিনেশ চান্ডিমালকে (৪) বিদায় করে শ্রীলঙ্কাকে আরও চাপে ফেলেন। পাওয়ার প্লেতে ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে স্বাগতিকরা।
ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা এবং অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কা জুটি গড়ার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়। ৩ রান করা আসালঙ্কাকে বোল্ড করে মেহেদি তার চতুর্থ উইকেট তুলে নেন। একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলা নিশাঙ্কা অর্ধশতকের কাছাকাছি পৌঁছে গেলেও ৪৬ রানে মেহেদির বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হন। ৩৯ বলে ৪টি চারের সাহায্যে তার এই ইনিংসটি আসে।
দলীয় ৬৬ রানে নিশাঙ্কার বিদায়ের পর কামিন্দু মেন্ডিস ও দাসুন শানাকা সম্মানজনক সংগ্রহ এনে দেওয়ার চেষ্টা করেন। শেষ ওভারে শরিফুলের উপর চড়াও হয়ে শানাকা ২২ রান তুললে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩২ রানে পৌঁছায়। শানাকা ২৫ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ৩৫ রান করেন, আর কামিন্দু ১৫ বলে ২১ রান করেন।
বাংলাদেশের পক্ষে মেহেদি হাসান তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং করে ৪ ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন।
বাংলাদেশের ইনিংস: তানজিদের টি-টোয়েন্টি ঝলক
১৩৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পেসার নুয়ান থুশারার বলে লেগ বিফোর আউট হন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন।
শুরুর ধাক্কা দারুণভাবে সামাল দেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান এবং অধিনায়ক লিটন দাস। পাওয়ার প্লেতে তারা ৪৭ রান সংগ্রহ করেন। নবম ওভারে লিটন কামিন্দুর শিকার হন, ২৬ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩২ রান করে। দ্বিতীয় উইকেটে তানজিদের সাথে তিনি ৫০ বলে ৭৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন।
দশম ওভারে চার মেরে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তানজিদ। মাত্র ২৭ বলে ৫টি ছক্কা ও ১টি চারের সাহায্যে তিনি এই মাইলফলক স্পর্শ করেন। হাফ-সেঞ্চুরির পর ব্যক্তিগত ৬০ রানে কামিন্দুর বলে থিকশানার হাতে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তানজিদ।
লিটনের বিদায়ের পর তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে তানজিদ ৪৮ বলে ৫৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন এবং ২ উইকেট হারিয়ে ১৩৩ রান তুলে ২১ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন। তানজিদ ৪৭ বলে ১ চার ও ৬ ছক্কায় টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার সেরা ৭৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। হৃদয় ২৫ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ২৭ রান করেন।
শ্রীলঙ্কার পক্ষে থুশারা ও কামিন্দু একটি করে উইকেট নেন।
এই ঐতিহাসিক জয়ের ফলে বাংলাদেশ দল প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বাদ পেলো।