সিলেট ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
News Title :
‎বানিয়াচংয়ে গভীর রাতে প্রবাসীর বাড়ি দখল, নিরীহ পরিবার জিম্মি! ‎নবীগঞ্জে চোরাই মোবাইল উদ্ধারে গিয়ে পুলিশের ওপর হামলা: ৫ জন আটক, ৬ পুলিশ সদস্য আহত‎ ‎নবীগঞ্জে আত্মহত্যা ও দাঙ্গা প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসনের সচেতনতামূলক সভা‎ সিলেটের জৈন্তাপুরে পালিত হলো জাতীয় কন্যা শিশু দিবস ‎ধনবাড়ীতে ওলামা দলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত: আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত ‎সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় গরু-মহিষের চোরাচালান আটক: বিজিবি’র সাফল্য ‎সখীপুরে মুসলিম জুয়েলার্সকে ১ লাখ টাকা জরিমানা ‎ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে হবিগঞ্জে আইনজীবীদের মানববন্ধন ‎টাঙ্গাইল সদরে চাড়াবাড়ি এস ডি এস ব্রীজের পশ্চিম অংশ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন মৃতের স্ত্রী হত্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিক পরিবারকে হয়রানি, তদন্ত প্রতিবেদনের উপর তিনবার নারাজি ॥

হবিগঞ্জের ৪ টি আসনে জামায়াতের প্রার্থী চূড়ান্ত, বিএনপি‘র প্রার্থী নিয়ে জট !

হবিগঞ্জ জেলায় আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তৎপরতা শুরু হয়েছে। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরইমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইতোমধ্যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হবিগঞ্জের চারটি আসনেই তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তবে, জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখনও প্রার্থীর জট কাটিয়ে উঠতে পারেনি, বা দলীয় ভাবে এখনও প্রার্থী চুড়ান্ত করেন নাই। তবে দলের মধ্যে একাধিক প্রার্থী থাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। যদিও তৃনমূল দাবী দলীয় হাইকমান্ড যাকে মার্কা দিবে তারা তার পক্ষে কাজ করবে।
যদিও তৃনমূল নেতাকর্মী এসব কথা বলছেন, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। জেলার প্রতিটি ইউনিটিতে গ্রুপিং লবিং আছেই। এটা প্রায় প্রকাশিত। তাদের এমন গ্রুপিংয়ের কারনে নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে বলে সচেতন মহল মনে করেন। এক্ষেত্রে জামায়াত খুবই ভাল অবস্থানে আছে। তাদের সাংগঠনিক অবস্থা খুবই মজবুত। জেলার ৪ টি আসনে তাদের প্রার্থীতা চুড়ান্ত হওয়ার পর থেকে তারা মাঠে ময়দানে নিরলস ভাবে কাজ শুরু করেছেন। তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি খুবই ভাল বলে তাদের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে এস তথ্য জানাযায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে জামায়াতে ভোট বেড়েছে বলে তাদের নেতাকর্মীদের দাবী। তারা প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন।
তবে সরকার যদি আওয়ামীলীগ কে নির্বাচনের অংশ গ্রহণের সুযোগ তা হলে ভোটের সমীকরণ বদলে যেতে পারে! তবে যেহেতু তাদের রাজনীতি আপাতত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তাই আগমাী নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে জেলার ৪ টি আসন নিয়ে হবিগঞ্জ জেলার বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও প্রার্থী সংকটে আছে দলটি। জেলার ৪ টি আসনে একাধিক প্রার্থীর ও নাম শোনা যাচ্ছে।
হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র প্রতিটি উপজেলা ইউনিটে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। পক্ষ-বিপক্ষে মিছিল, মিটিং এবং নেতাদের নামে ব্যানার-ফেস্টুন দেখা যাচ্ছে, যা দলীয় ঐক্যে ফাটল ধরিয়েছে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
হবিগঞ্জ ৪ টি আসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হবিগঞ্জ-লাখাই সদর আসন (হবিগঞ্জ-৩)
হবিগঞ্জ সদর আসনে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক জনপ্রিয় মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছের মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত বলে নেতাকর্মীরা দাবি করছেন। তারা মনে করেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী এমএস কিবরিয়া হত্যা মামলাসহ অসংখ্য মিথ্যা মামলায় ১৭ বছর জেল খেটেছেন এবং দুর্দিনে জেলা বিএনপিকে আগলে রেখেছেন। তাই নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, হবিগঞ্জ সদর আসনে জি কে গউছের বিকল্প নেই। যদিও ড্যাবের জেলা নেতা ডাক্তার আহমেদুর রহমান আবদালও এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং করে যাচ্ছেন বলে তার অনুসারীগণ জানান। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন ইউনিটের অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন।
বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ আসন (হবিগঞ্জ-২)
হবিগঞ্জ-২ বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ আসনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন দীর্ঘদিন ধরে মাঠে নিরলসভাবে কাজ করে আসছেন। তবে, তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি’র কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও বিএনপি সৌদি আরবের সাবেক সভাপতি আহমদ মুকিব আবদুল্লাহও শক্ত অবস্থানে আছেন। এই দুই নেতাকে নিয়ে উপজেলা বিএনপি কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত। তাদের কর্মী-সমর্থকরা প্রকাশ্যে মিছিল-মিটিং করছেন এবং সম্প্রতি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সম্মেলন নিয়েও বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
অনেক নেতাকর্মীর মতে, আহমেদ মুকিব আবদুল্লাহ বলয় শক্তিশালী এবং তার সঙ্গে আলহাজ্ব জি কে গউছের ভালো সখ্যতা রয়েছে বলে এলাকায় রব উঠেছে। এছাড়া, আহমেদ মুকিব আবদুল্লাহ বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত বলেও নেতাকর্মীরা জানান।
তবে তৃণমূল বিএনপি’র দাবি, ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন দীর্ঘদিনের মাঠের পরীক্ষিত রাজনীতিবিদ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদের পক্ষে কাজ করেছিলেন।
যদি এবারও বিএনপি খেলাফত মজলিসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়, তাহলে আবদুল বাসিত আজাদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ আসনে মনোনয়ন চাইবেন, যা প্রায় নিশ্চিত বলা চলে। কারণ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রায় ৬০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। তবে, দুপুরে বিএনপি নির্বাচনে বয়কটের ঘোষণা আসার পর তিনি ভোট বর্জন করেন।
আগামী নির্বাচনে জোট হলে, ডা. জীবন বা আবদুল্লাহ—দুজনেরই এই আসনে মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে, গ্রামের-গঞ্জে ডা. জীবনের গ্রহণযোগ্যতা বেশি বলে অনেকের ধারণা। বিগত বানিয়াচং উপজেলা বিএনপি সম্মেলনে ডা. জীবনপন্থী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে, সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত সহ নানান অভিযোগ ওঠায় তারা সাময়িক অব্যাহতিতে আছেন, যা ডা. জীবন বলয়ের নেতাকর্মীদের বিপাকে ফেলেছে বলে অনকেই মনে করছেন।
নবীগঞ্জ-বাহুবল আসন (হবিগঞ্জ-১)
হবিগঞ্জ-১ নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনে সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া ভালো অবস্থানে আছেন। তবে, এই আসনেও একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে এবং অন্য প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরাও দলীয় শক্তির পরিচয় দিচ্ছেন।
মাধবপুর-চুনারুঘাট আসন (হবিগঞ্জ-৪)
হবিগঞ্জ-৪ মাধবপুর-চুনারুঘাট আসনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেত্রী শাম্মি আক্তার শক্ত অবস্থানে থাকলেও, আরেক শক্তিশালী প্রার্থী ধনকুবের সায়হাম গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সলও মাঠে আছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি’র পরীক্ষিত নেতা এবং মাধবপুরে তার প্রভাব লক্ষণীয়। তার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে হাজার হাজার ভোটার কাজ করায় তিনি বাড়তি সুবিধা পাবেন বলে নেতাকর্মীরা মনে করেন। যদিও এই আসনে দলীয় বিভাজন আছে, তবে শাম্মি আক্তারের পাল্লাই ভারী বলে তার অনুসারীরা দাবি করছেন।
জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তুতি হবিগঞ্জ জেলার ৪ টি আসনে বেশ ভাল অবস্থানে আছেন তারা।
বিএনপি’র জেলাব্যাপী দলীয় কোন্দলের কারণে জামায়াতে ইসলামী ভালো অবস্থানে রয়েছে। তারা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করায় দলীয় কার্যক্রম আরও গতিশীল হয়েছে। হবিগঞ্জের চারটি আসনেই তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে:

  • হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল): সিলেট মহানগরী শাখার জামায়াতের সেক্রেটারি ও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান আলীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
  • হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ): ঢাকা উত্তরের হাতিরঝিল থানার আমীর ও আজমিরীগঞ্জের সন্তান এডভোকেট জিল্লুর রহমান আযমীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
  • হবিগঞ্জ-৩ (হবিগঞ্জ সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ): জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মহসীন আহমেদ মনোনয়ন পেয়েছেন।
  • হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট): জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মুখলিছুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
    আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলসমূহকে নিয়ে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে হবিগঞ্জের চারটি আসনেই বিএনপিকে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে। কারণ, হবিগঞ্জ জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিএনপি’র দুই ভাগে বিভক্তির অভিযোগ রয়েছে। যদি তারা গ্রুপিংয়ের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারে, তাহলে প্রতিটি আসনই ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে বলে সাধারণ জনগণের ধারণা।
    নির্বাচন ও সাংগঠনিক বিষয়ে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন’র সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, আমি হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে ১৪ মামলার আসামি হয়েছি, জেল খেটেছি। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাবস্থায় সিলেট বিভাগে সব পর্যায়ের নেতাকে নিয়ে সংগঠন সুসংগঠিত করতে রাত-দিন কাজ করেছি। সংগত কারণে দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আশা করছি। আমাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি বিএনপিকে নিশ্চিত উপহার দিতে পারব বলে তিনি অনলাইন সিলেট ডটকম কে বলেন।
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

‎বানিয়াচংয়ে গভীর রাতে প্রবাসীর বাড়ি দখল, নিরীহ পরিবার জিম্মি!

হবিগঞ্জের ৪ টি আসনে জামায়াতের প্রার্থী চূড়ান্ত, বিএনপি‘র প্রার্থী নিয়ে জট !

সময় ১২:০৬:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

হবিগঞ্জ জেলায় আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তৎপরতা শুরু হয়েছে। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরইমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইতোমধ্যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হবিগঞ্জের চারটি আসনেই তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তবে, জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখনও প্রার্থীর জট কাটিয়ে উঠতে পারেনি, বা দলীয় ভাবে এখনও প্রার্থী চুড়ান্ত করেন নাই। তবে দলের মধ্যে একাধিক প্রার্থী থাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। যদিও তৃনমূল দাবী দলীয় হাইকমান্ড যাকে মার্কা দিবে তারা তার পক্ষে কাজ করবে।
যদিও তৃনমূল নেতাকর্মী এসব কথা বলছেন, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। জেলার প্রতিটি ইউনিটিতে গ্রুপিং লবিং আছেই। এটা প্রায় প্রকাশিত। তাদের এমন গ্রুপিংয়ের কারনে নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে বলে সচেতন মহল মনে করেন। এক্ষেত্রে জামায়াত খুবই ভাল অবস্থানে আছে। তাদের সাংগঠনিক অবস্থা খুবই মজবুত। জেলার ৪ টি আসনে তাদের প্রার্থীতা চুড়ান্ত হওয়ার পর থেকে তারা মাঠে ময়দানে নিরলস ভাবে কাজ শুরু করেছেন। তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি খুবই ভাল বলে তাদের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে এস তথ্য জানাযায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে জামায়াতে ভোট বেড়েছে বলে তাদের নেতাকর্মীদের দাবী। তারা প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন।
তবে সরকার যদি আওয়ামীলীগ কে নির্বাচনের অংশ গ্রহণের সুযোগ তা হলে ভোটের সমীকরণ বদলে যেতে পারে! তবে যেহেতু তাদের রাজনীতি আপাতত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তাই আগমাী নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে জেলার ৪ টি আসন নিয়ে হবিগঞ্জ জেলার বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও প্রার্থী সংকটে আছে দলটি। জেলার ৪ টি আসনে একাধিক প্রার্থীর ও নাম শোনা যাচ্ছে।
হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র প্রতিটি উপজেলা ইউনিটে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। পক্ষ-বিপক্ষে মিছিল, মিটিং এবং নেতাদের নামে ব্যানার-ফেস্টুন দেখা যাচ্ছে, যা দলীয় ঐক্যে ফাটল ধরিয়েছে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
হবিগঞ্জ ৪ টি আসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হবিগঞ্জ-লাখাই সদর আসন (হবিগঞ্জ-৩)
হবিগঞ্জ সদর আসনে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক জনপ্রিয় মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছের মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত বলে নেতাকর্মীরা দাবি করছেন। তারা মনে করেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী এমএস কিবরিয়া হত্যা মামলাসহ অসংখ্য মিথ্যা মামলায় ১৭ বছর জেল খেটেছেন এবং দুর্দিনে জেলা বিএনপিকে আগলে রেখেছেন। তাই নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, হবিগঞ্জ সদর আসনে জি কে গউছের বিকল্প নেই। যদিও ড্যাবের জেলা নেতা ডাক্তার আহমেদুর রহমান আবদালও এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং করে যাচ্ছেন বলে তার অনুসারীগণ জানান। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন ইউনিটের অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন।
বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ আসন (হবিগঞ্জ-২)
হবিগঞ্জ-২ বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ আসনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন দীর্ঘদিন ধরে মাঠে নিরলসভাবে কাজ করে আসছেন। তবে, তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি’র কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও বিএনপি সৌদি আরবের সাবেক সভাপতি আহমদ মুকিব আবদুল্লাহও শক্ত অবস্থানে আছেন। এই দুই নেতাকে নিয়ে উপজেলা বিএনপি কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত। তাদের কর্মী-সমর্থকরা প্রকাশ্যে মিছিল-মিটিং করছেন এবং সম্প্রতি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সম্মেলন নিয়েও বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
অনেক নেতাকর্মীর মতে, আহমেদ মুকিব আবদুল্লাহ বলয় শক্তিশালী এবং তার সঙ্গে আলহাজ্ব জি কে গউছের ভালো সখ্যতা রয়েছে বলে এলাকায় রব উঠেছে। এছাড়া, আহমেদ মুকিব আবদুল্লাহ বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত বলেও নেতাকর্মীরা জানান।
তবে তৃণমূল বিএনপি’র দাবি, ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন দীর্ঘদিনের মাঠের পরীক্ষিত রাজনীতিবিদ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদের পক্ষে কাজ করেছিলেন।
যদি এবারও বিএনপি খেলাফত মজলিসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়, তাহলে আবদুল বাসিত আজাদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ আসনে মনোনয়ন চাইবেন, যা প্রায় নিশ্চিত বলা চলে। কারণ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রায় ৬০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। তবে, দুপুরে বিএনপি নির্বাচনে বয়কটের ঘোষণা আসার পর তিনি ভোট বর্জন করেন।
আগামী নির্বাচনে জোট হলে, ডা. জীবন বা আবদুল্লাহ—দুজনেরই এই আসনে মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে, গ্রামের-গঞ্জে ডা. জীবনের গ্রহণযোগ্যতা বেশি বলে অনেকের ধারণা। বিগত বানিয়াচং উপজেলা বিএনপি সম্মেলনে ডা. জীবনপন্থী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে, সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত সহ নানান অভিযোগ ওঠায় তারা সাময়িক অব্যাহতিতে আছেন, যা ডা. জীবন বলয়ের নেতাকর্মীদের বিপাকে ফেলেছে বলে অনকেই মনে করছেন।
নবীগঞ্জ-বাহুবল আসন (হবিগঞ্জ-১)
হবিগঞ্জ-১ নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনে সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া ভালো অবস্থানে আছেন। তবে, এই আসনেও একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে এবং অন্য প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরাও দলীয় শক্তির পরিচয় দিচ্ছেন।
মাধবপুর-চুনারুঘাট আসন (হবিগঞ্জ-৪)
হবিগঞ্জ-৪ মাধবপুর-চুনারুঘাট আসনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেত্রী শাম্মি আক্তার শক্ত অবস্থানে থাকলেও, আরেক শক্তিশালী প্রার্থী ধনকুবের সায়হাম গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সলও মাঠে আছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি’র পরীক্ষিত নেতা এবং মাধবপুরে তার প্রভাব লক্ষণীয়। তার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে হাজার হাজার ভোটার কাজ করায় তিনি বাড়তি সুবিধা পাবেন বলে নেতাকর্মীরা মনে করেন। যদিও এই আসনে দলীয় বিভাজন আছে, তবে শাম্মি আক্তারের পাল্লাই ভারী বলে তার অনুসারীরা দাবি করছেন।
জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তুতি হবিগঞ্জ জেলার ৪ টি আসনে বেশ ভাল অবস্থানে আছেন তারা।
বিএনপি’র জেলাব্যাপী দলীয় কোন্দলের কারণে জামায়াতে ইসলামী ভালো অবস্থানে রয়েছে। তারা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করায় দলীয় কার্যক্রম আরও গতিশীল হয়েছে। হবিগঞ্জের চারটি আসনেই তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে:

  • হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল): সিলেট মহানগরী শাখার জামায়াতের সেক্রেটারি ও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান আলীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
  • হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ): ঢাকা উত্তরের হাতিরঝিল থানার আমীর ও আজমিরীগঞ্জের সন্তান এডভোকেট জিল্লুর রহমান আযমীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
  • হবিগঞ্জ-৩ (হবিগঞ্জ সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ): জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মহসীন আহমেদ মনোনয়ন পেয়েছেন।
  • হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট): জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মুখলিছুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
    আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলসমূহকে নিয়ে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে হবিগঞ্জের চারটি আসনেই বিএনপিকে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে। কারণ, হবিগঞ্জ জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিএনপি’র দুই ভাগে বিভক্তির অভিযোগ রয়েছে। যদি তারা গ্রুপিংয়ের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারে, তাহলে প্রতিটি আসনই ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে বলে সাধারণ জনগণের ধারণা।
    নির্বাচন ও সাংগঠনিক বিষয়ে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন’র সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, আমি হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে ১৪ মামলার আসামি হয়েছি, জেল খেটেছি। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাবস্থায় সিলেট বিভাগে সব পর্যায়ের নেতাকে নিয়ে সংগঠন সুসংগঠিত করতে রাত-দিন কাজ করেছি। সংগত কারণে দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আশা করছি। আমাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি বিএনপিকে নিশ্চিত উপহার দিতে পারব বলে তিনি অনলাইন সিলেট ডটকম কে বলেন।