
একসময় পুরান ঢাকার সকালের নাস্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ বাকরখানি এখন সুদূর লাখাই উপজেলার হাটবাজারেও পাওয়া যাচ্ছে। ময়দা দিয়ে তৈরি এই মচমচে রুটিজাতীয় খাবারটি পুরান ঢাকার শত শত বছরের ঐতিহ্য বহন করে। পুরান ঢাকার প্রতিটি অলিগলিতে এর দোকান দেখা গেলেও, এখন এর সুস্বাদ পৌঁছে গেছে মফস্বলের ক্রেতাদের কাছেও।
বাকরখানি মূলত ময়দার খামির থেকে তৈরি এক প্রকার মচমচে রুটি। সাধারণত এতে অন্য কোনো স্বাদবর্ধক না থাকলেও, চিনিযুক্ত বাকরখানিও পাওয়া যায়। যদিও চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের বাকরখানি তুলনামূলক রসালো ও মিষ্টি হয়ে থাকে। একসময় ঢাকার প্রসিদ্ধ এই রুটি এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে, এটি উপঢৌকন হিসেবেও পাঠানো হতো।
এর উৎপত্তিস্থল আফগানিস্তান ও রাশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায়। ঢাকায় সর্বপ্রথম বাকরখানির দোকান গড়ে উঠেছিল লালবাগ কেল্লার কাছে। বর্তমানে গাজীপুর চৌরাস্তা, সফিপুর ও টাঙ্গাইলের মতো এলাকাতেও বাকরখানি সহজলভ্য।
লাখাইয়ে বাকরখানির জয়যাত্রা

আশ্চর্যজনকভাবে, লাখাই উপজেলার ব্যবসায়ীরাই এখন বাকরখানি ব্যবসার প্রায় ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছেন। মূলত ঢাকার বাকরখানি ব্যবসা থেকে ফেরা লাখাইয়ের বাসিন্দারাই তাদের নিজ এলাকায় এই ব্যবসা শুরু করেছেন। বামৈ, বুল্লা বাজারসহ অনেক এলাকায় বাকরখানির দোকান দিয়েছেন তারা।
বামৈ বাজারের ব্যবসায়ী সালা উদ্দিনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি ১৩ বছর ঢাকায় বাকরখানির ব্যবসা করার পর কয়েক বছর হলো নিজ এলাকায় ফিরে দোকান দিয়েছেন। তার মতে, যদিও এখানে ঢাকার মতো বিক্রি বা লাভ কম, তবুও স্থানীয় মানুষজন ঐতিহ্যবাহী এই খাবার উপভোগ করতে পারায় তিনি খুশি। ময়দা, চিনি ও তেলের দাম বাড়ার কারণে লাভের পরিমাণ সীমিত হলেও, তিনি এখন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্যাসের চুলায় স্বয়ংক্রিয় মেশিনে বাকরখানি তৈরি করছেন।
বাকরখানির চাহিদা ও দাম

সকালের নাস্তা বা চায়ের সাথে বাকরখানি এক দারুণ সংমিশ্রণ। গরম গরম মচমচে বাকরখানি যেমন সুস্বাদু, তেমনি এর দামও বেশ সাশ্রয়ী। প্রতি কেজি বাকরখানি ১৭০ টাকা থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়, তবে মফস্বল এলাকায় এটি আরও কম দামে পাওয়া যায়। পুরান ঢাকায় সারা বছরই বাকরখানি পাওয়া গেলেও, বিশেষ করে ঈদের সময় এর চাহিদা অনেক বেড়ে যায়।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই খাবারটি এখন কেবল রাজধানীর গণ্ডি পেরিয়ে লাখাইয়ের মতো উপজেলা পর্যায়েও তার স্বাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা স্থানীয়দের কাছে এক নতুন আকর্ষণ।