সিলেট ১০:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
News Title :
এসএমপি’তে দুই পুলিশ সদস্যের র‍্যাংক ব্যাজ পরিধান আজমিরীগঞ্জে জমি সংক্রান্তবিরোধের জেরে এক ব্যক্তি নিহত লাখাইয়ে সাংবাদিক প্রোটন দাশ গুপ্তের ২৫তম প্রয়াণ দিবস ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত আজ ১৪ জুন, সাংবাদিক প্রোটনদাশগুপ্তের ২৫তম প্রয়াণ দিবস। বানিয়াচংয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত, ৫৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের বানিয়াচংয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির প্রান্তিক মানুষের সেবায় আলোর দিশারী।। লাখাইয়ের হাটবাজারে এখন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাকরখানি বানিয়াচংয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির: আগামীকাল উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার।। বানিয়াচং ইসলামিক সমাজ সেবা ঐক্য পরিষদ ওমান সালালার উদ্যোগে মৃত প্রবাসীর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা সালমানের টুইট, প্রীতির চোখ টিপ আর আইয়ারে ঘুরে দাঁড়ানো—এ যেন বলিউডি চিত্রনাট্য

সাংবাদিক আখলাক হুসেইন খান খেলু এক হারানো মানিক।।

আখলাক হুসেইন খান খেলু, ফাইল ছবি।

পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক কিছু নিয়েই বিতর্ক হয়, তবে জন্মিলে মৃত্যু অবধারিত তা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। মৃত্যু অমোঘ নিয়ম।“প্রত্যেক প্রাণীকে একদিন না একদিন মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে।- (আল কোরআন)
তবুও কিছু মৃত্যু মনের মধ্যে দাগ কাটে এবং অনেকদিন এর ক্ষত বহন করতে হয়। প্রিয় আখলাক হুসেইন খান খেলু ভাই ছিলেন আমার হৃদয়ে বহতা নদীর মতো। আমি ২০০৬ সালে স্থানীয় একটি পত্রিকার রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করার পর বানিয়াচং এর কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে।
তখন থেকেই আখলাক হুসেইন খান খেলু ভাইয়ের সাথেও ক্রমশ হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী হতে থাকে। সব সময় দেখতাম এ মানুষটি অত্যন্ত পরিপাটি হয়ে বাজারে আসতেন এবং জ্ঞানী-গুণী মানুষদের আড্ডায় মধ্যমনি হয়ে থাকতেন। সেই আড্ডা হচ্ছে, সংবাদ, দেশের অর্থনীতি ও চলমান রাজনীতি নিয়ে। আমরা যখন কাছে গিয়ে বসতাম তখন তিনি আমাদের সংবাদ বিষয়ে অনেক পরামর্শ দিতেন, কিভাবে একটি স্বার্থক ও বস্তনিষ্ট সংবাদ তৈরী হয় সে ব্যাপারে আলোকপাত করতেন। তিনি যা জানতেন তা বিলিয়ে দিতে মোটেও কার্পন্য করতেন না। খেলু ভাই ছিলেন সভ্রান্ত পরিবারের সন্তান।
তিনি মানুষকে চিত্ত উজাড় করে ভালবেসেছেন। মফস্বলে বসবাস করেও জাতীয় সাংবাদিকতা সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান রাখতেন। স্বার্থক সাংবাদিকের গুণ হচ্ছে, সব বিষয়ে ধারণা রাখা, মানসিক অনুভূতি, রসবোধ, সু্বিন্যাস্ত মনের শৃংখলা থাকা, রাজনৈতিক ও পেশাগত জ্ঞান, বিশ্লেষণী মন, কাজের ক্ষিপ্রতা ও লেখার সম্মোহনী শক্তি এ সবই বিদ্যমান ছিল খেলু ভাইয়ের মাঝে ।
তিনি মফস্বলে অবস্থান করে জাতীয় দৈনিক যুগান্তর, সমকাল, কালের কন্ঠের মতো জাদরেল পত্রিকায় কলাম লিখতেন। ছিলেন মানবজমিন পত্রিকার হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি। এক সময় বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ,দিরাই-শাল্লা,সুনামগঞ্জের ইরি-বোরো ফসল অকাল বন্যায় তলিয়ে যেত।এতে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম হতো। ফসলের দিকে তাকিয়ে থাকতেন এসব এলাকার লাখ-লাখ মানুষ। ফসলহানি হলে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বেড়ে যেত। হাওরাঞ্চল এলাকার কৃষকদের সুখ-দুঃখ হবিগঞ্জের দৈনিক প্রভাকর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক নোমান চৌধুরী (প্রয়াত) এবং হাওর গবেষক আমাদের গর্বের ধন আখলাক হুসেইন খান খেলু ভাই শাণিত কলমের আঁচরে সুনিপুণ ভাবে তুলে ধরেছেন। এসব লেখায় এক সময় সরকার নজর দেন এবং এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার ফলে আজ ভাটি এলাকার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। মানুষের দুঃখ জয় করেছেন ঠিকই কিন্তু নিজের সুখের প্রতি একেবারেই বে-খবর ছিলেন। যে কারণে সংসারটা পর্যন্ত সঠিক সময়ে করতে পারেননি। যে কারণে মৃত্যুর আগে তিনি নিদারুণ ভাবে অর্থে-কষ্টে পতিত হয়েছিলেন।
খেলু ভাই সাংবাদিকতা অঙ্গন ছাড়াও সামাজিক অঙ্গনে সমাদৃত ছিলেন। তিনি সংবাদের ভিতরের সংবাদ তুলে ধরতেন অনায়াসে। আজ হয়তো সংবাদ কর্মীর অভাব নেই, তবে সংবাদের ভিতরের সংবাদ তুলে আনার মতো সংবাদ কর্মীর বড্ড বেশি অভাব এ সমাজে। আজ তিনি আমাদের থেকে অনেক দূরে। তিনি নেই, তিনি আছেন হৃদয়পানে। রয়ে গেছে অমর স্মৃতি এবং কাব্যিক জীবনী। খেলু ভাইয়ের মতো বহু গুনে গুনান্বিত মানুষের এ সমাজে বড়ই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সবাইকেই একদিন এ নশ্বর ধরা থেকে চলে যেতে হবে, তিনিও চলে গেছেন আমরা ও একই পথের যাত্রী। পরপারে ভালো থাকুন প্রিয় খেলু ভাই।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বানিয়াচং মডেল প্রেসক্লাব।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

এসএমপি’তে দুই পুলিশ সদস্যের র‍্যাংক ব্যাজ পরিধান

সাংবাদিক আখলাক হুসেইন খান খেলু এক হারানো মানিক।।

সময় ০২:৩২:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
আখলাক হুসেইন খান খেলু, ফাইল ছবি।

পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক কিছু নিয়েই বিতর্ক হয়, তবে জন্মিলে মৃত্যু অবধারিত তা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। মৃত্যু অমোঘ নিয়ম।“প্রত্যেক প্রাণীকে একদিন না একদিন মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে।- (আল কোরআন)
তবুও কিছু মৃত্যু মনের মধ্যে দাগ কাটে এবং অনেকদিন এর ক্ষত বহন করতে হয়। প্রিয় আখলাক হুসেইন খান খেলু ভাই ছিলেন আমার হৃদয়ে বহতা নদীর মতো। আমি ২০০৬ সালে স্থানীয় একটি পত্রিকার রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করার পর বানিয়াচং এর কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে।
তখন থেকেই আখলাক হুসেইন খান খেলু ভাইয়ের সাথেও ক্রমশ হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী হতে থাকে। সব সময় দেখতাম এ মানুষটি অত্যন্ত পরিপাটি হয়ে বাজারে আসতেন এবং জ্ঞানী-গুণী মানুষদের আড্ডায় মধ্যমনি হয়ে থাকতেন। সেই আড্ডা হচ্ছে, সংবাদ, দেশের অর্থনীতি ও চলমান রাজনীতি নিয়ে। আমরা যখন কাছে গিয়ে বসতাম তখন তিনি আমাদের সংবাদ বিষয়ে অনেক পরামর্শ দিতেন, কিভাবে একটি স্বার্থক ও বস্তনিষ্ট সংবাদ তৈরী হয় সে ব্যাপারে আলোকপাত করতেন। তিনি যা জানতেন তা বিলিয়ে দিতে মোটেও কার্পন্য করতেন না। খেলু ভাই ছিলেন সভ্রান্ত পরিবারের সন্তান।
তিনি মানুষকে চিত্ত উজাড় করে ভালবেসেছেন। মফস্বলে বসবাস করেও জাতীয় সাংবাদিকতা সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান রাখতেন। স্বার্থক সাংবাদিকের গুণ হচ্ছে, সব বিষয়ে ধারণা রাখা, মানসিক অনুভূতি, রসবোধ, সু্বিন্যাস্ত মনের শৃংখলা থাকা, রাজনৈতিক ও পেশাগত জ্ঞান, বিশ্লেষণী মন, কাজের ক্ষিপ্রতা ও লেখার সম্মোহনী শক্তি এ সবই বিদ্যমান ছিল খেলু ভাইয়ের মাঝে ।
তিনি মফস্বলে অবস্থান করে জাতীয় দৈনিক যুগান্তর, সমকাল, কালের কন্ঠের মতো জাদরেল পত্রিকায় কলাম লিখতেন। ছিলেন মানবজমিন পত্রিকার হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি। এক সময় বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ,দিরাই-শাল্লা,সুনামগঞ্জের ইরি-বোরো ফসল অকাল বন্যায় তলিয়ে যেত।এতে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম হতো। ফসলের দিকে তাকিয়ে থাকতেন এসব এলাকার লাখ-লাখ মানুষ। ফসলহানি হলে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বেড়ে যেত। হাওরাঞ্চল এলাকার কৃষকদের সুখ-দুঃখ হবিগঞ্জের দৈনিক প্রভাকর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক নোমান চৌধুরী (প্রয়াত) এবং হাওর গবেষক আমাদের গর্বের ধন আখলাক হুসেইন খান খেলু ভাই শাণিত কলমের আঁচরে সুনিপুণ ভাবে তুলে ধরেছেন। এসব লেখায় এক সময় সরকার নজর দেন এবং এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার ফলে আজ ভাটি এলাকার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। মানুষের দুঃখ জয় করেছেন ঠিকই কিন্তু নিজের সুখের প্রতি একেবারেই বে-খবর ছিলেন। যে কারণে সংসারটা পর্যন্ত সঠিক সময়ে করতে পারেননি। যে কারণে মৃত্যুর আগে তিনি নিদারুণ ভাবে অর্থে-কষ্টে পতিত হয়েছিলেন।
খেলু ভাই সাংবাদিকতা অঙ্গন ছাড়াও সামাজিক অঙ্গনে সমাদৃত ছিলেন। তিনি সংবাদের ভিতরের সংবাদ তুলে ধরতেন অনায়াসে। আজ হয়তো সংবাদ কর্মীর অভাব নেই, তবে সংবাদের ভিতরের সংবাদ তুলে আনার মতো সংবাদ কর্মীর বড্ড বেশি অভাব এ সমাজে। আজ তিনি আমাদের থেকে অনেক দূরে। তিনি নেই, তিনি আছেন হৃদয়পানে। রয়ে গেছে অমর স্মৃতি এবং কাব্যিক জীবনী। খেলু ভাইয়ের মতো বহু গুনে গুনান্বিত মানুষের এ সমাজে বড়ই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সবাইকেই একদিন এ নশ্বর ধরা থেকে চলে যেতে হবে, তিনিও চলে গেছেন আমরা ও একই পথের যাত্রী। পরপারে ভালো থাকুন প্রিয় খেলু ভাই।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বানিয়াচং মডেল প্রেসক্লাব।