ফুটবল খেলা কে ভালবাসেন না এমন লোক পৃথিবীতে খুজে পাওয়া বড়ই মুশকিল।
পৃথিবীর প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ ফুটবল খেলা কে পছন্দ করেন এটা আমার অভিমত, তা কম বেশি হতে পারে। আবার অনেকই ভিন্ন খেলা ভালবাসেন। কেউ ক্রিকেট খেলা বা অন্যান্য খেলা ভাল পেয়ে থাকেন। ক্রিকেট খেলা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচয় করে দিয়েছে। এটা অনেক গর্বের বিষয়ে।
পৃথিবীতে নানা প্রকারের খেলাধুলা আছে।তবে ফুটবল খেলা নিয়ে উত্তেজনা খুবই কম খেলা দেখা যায়। ফুটবল ৯০ মিনিটে খেলা। এই সময়ে মানুষের মাঝে নিজের দলের সাপোর্টার হিসেবে চরম উত্তেজনা থাকে। দল জিতলে খুশি হারলে মনটা বিষন্নতা ভরে যায়। ফুটবলে মেসি রোনালদো নেইমার এবং এমবাপ্পে সহ নানান খেলোয়াড় বিশ্বজুড়ে বেশ জনপ্রিয়। এর বাহিরে অন্য খেলোয়াড়দের বিশ্বে তাদের পরিচিতি লক্ষনীয়।
আমি যখন থেকে খেলা দেখা শুরু, তখনকার সময় পেলে ম্যারাডোনার উন্মাদনা সারা বিশ্বে।
বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা আসলেই পৃথিবীর মানুষ দুইভাগে ভাগ হয়ে যেতে।
হালে আমলে মেসি নেইমার রোনালদো ও এমবাপ্পে খেলা নিয়ে এখনও কয়েক ভাগে বিভক্ত বিশ্ব ফুটবল।
ফুটবল খেলায় রেফারি বা খেলোয়াড়দের উপর দর্শকদের আঘাতের ঘটনা বিশ্বের নানান দেশে হয়ে থাকে,তবে তাদের বিচারও শাস্তি হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে সে-রকম বিচার লক্ষ করা যায় না!
বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা ব্রাজিল এই দুই দলের সাপোর্টার খুবই বেশি। বিশ্বকাপ শুরু থেকে দু’দলের সমর্থকদের মাঝে চরমভাবে উত্তেজনা কাজ করে। আমরা খেলা দেখার দিন নানান আয়োজন থাকতো সমর্থকদের মাঝে। দল জিতলে আনন্দ হারলে মনটা বিষন্নতায় ভরে যায়।
তখন মনটা কে আমরা প্রবোধ দিতাম আজকে হেরেছে আবার অন্যদিন জিতবে। আর এটাই একজন সমর্থকের প্রত্যাশা থাকে।
আমি নিজেও দীর্ঘদিন ফুটবল খেলেছি নানান জায়গায় গিয়েছি। আনন্দ ও বেদনা ও আছে। অনেক সময় মারামারি মত অবস্থায় আমরাও পড়েছি। তখন কিন্তু খেলোয়াড় বা রেফারির উপর আক্রমণ হতে দেখিনি। গ্রামীন এলাকায় বৈশাখ মাসে বোরো ধান তোলার পর ফুটবল টুনামেন্ট বা দাওয়াতী খেলা (সৌজন্য মুলক) খেলা হত গ্রামেগঞ্জের অধিকাংশ এলাকায়। সেখানে হয়তো কোন কারনে দর্শকদের মাঝে সংঘাত সংঘটিত হত। এটা আবার মিমাংসা হয়ে যেত। তারপর মানুষ ফুটবল কে ভালবাসে।
আমরা গ্রাম বা শহরে এখন ফুটবল খেলা হলে হাজার হাজার দর্শক উপস্থিতি দেখা যায়। তা জায়গায় লক্ষণীয়।
মানুষ এখনও ফুটবল কে ভালবাসে সেই উপস্থিত দেখলেই বুঝার বাকি থাকে না। আগেই বলেছি ফুটবল ৯০ মিনিটের উত্তেজনাকর খেলা। এই খেলায় আবেগ থাকবে উচ্চাছ ও থাকবে, এই বলে যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে হয় এটা একদম শোভনীয় নয়। আমরা লক্ষ করেছি খেলা পরিচালনায় দায়িত্বে যিনি থাকেন, তিনি সব সময় নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চেষ্টা করেন থাকেন। তবে সেখানে যে ভুল হয় না এটা একদম বলা যাবে না। সেটা রেফারির অনিচ্ছায়কৃত ভুল বলা চলে। কারন একজন রেফারি তো কোন দলের পক্ষে আসেন না। তিনি আয়োজক কমিটির অনুরোধে জেলা থেকে বা অন্য জায়গায় থেকে এসে খেলা পরিচালনা করে থাকেন।
আমাদের বানিয়াচংয়ে জুয়েল মাঠে সম্মানিত রেফারির সাথে যে ঘটনাটি ঘটেছে এটা আসলে খুবই অন্যায় কাজে হয়ছে। একজন রেফারির গায়ে আঘাত করা এটা খুবই অন্যায় এবং চরম অপরাধের মধ্যে পড়ে। একজন রেফারির কে আঘাত করা মানে সমস্ত খেলোয়াড়, দর্শক ও আয়োজক কমিটির উপর আঘাতের শামিল।
খেলায় রেফারি ভুল করতে পারেন, এটাও স্বাভাবিক, কিন্তু ফিফার আইনে রেফারির সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত।
যদিও এখন ফুটবলে নতুন প্রযুক্তি সংযোজন হয়েছে। রেফারি যদি মনে করেন তা হলে প্রযুক্তি সহায়তায় সিদ্ধান্ত বদল করতে পারেন। কিন্তু আমাদের মফস্বলে তো সেরকম ব্যবস্থা নেই। রেফারির সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত বলে মেনে নিতে হয়।
সম্প্রতি বানিয়াচং উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী জুয়েল মাঠে একটি খেলায় রেফারির উপরে উপরে চরমভাবে আঘাত করে উনাকে মাটিতে ফেলে দেয়া। এটা সোস্যাল মিডিয়া সাথে সাথে প্রকাশিত হয়। এই নিয়ে দেশে বিদেশে নিন্দা ঝড় উঠে। বানিয়াচং কে নিয়ে নানান মানুষ ধিক্কার দিয়েছেন কটুকথা শুনিয়েছেন। এটা তাদের বলাটা আমি মনে করি স্বাভাবিক। কারন এরজন্য তো আমরাও দায়ী। যদিও এই ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিকে বানিয়াচংয়ের মানুষ বয়কট সহ নিন্দা জানিয়ে থাকে আইনের আওয়াত আনার কথা বলেছেন। এটা থেকে প্রমাণিত হয় বানিয়াচং বাসী অন্যায় কাজ কে কখনোও সমর্থন করে না কোন দিন করবে না। আমি বানিয়াচংয়ের সন্তান, এই ঘটনায় আমিও ব্যতিত মর্মাহত হই।
আমি সব সময় বানিয়াচংয়ের ভাল কাজে অনুপ্রাণিত হই।
আমি যখনই দেখি সামনে বিসিএস, এমবিবিএস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হচ্ছে তখন ফেসবুক বা ব্যক্তিগত ভাবে খবর নেয়ার চেষ্টা করি আমাদের এলাকার ক’জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হল। এসব খবর শুধু আমি নই অন্যরাও এমন খবর নিয়ে থাকেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
তাই বানিয়াচং বাসীর সব সময় প্রত্যাশা থাকে পজিটিভ বানিয়াচং দেখার।
আমরা বানিয়াচংবাসী কিন্তু পৃথিবীর বড় গ্রামের মানুষ, কিছু ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার খুবই প্রয়োজন। আমরা বড় গ্রামের মানুষ আমাদের মনটাও বড় হওয়া চাই। বানিয়াচংয়ে হরহামেশাই তুচ্ছ বিষয়
নিয়ে মারাত্মক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ি। এতে মারাত্মক জখম সহ প্রাণহানির মত ঘটনা ঘটে থাকে ।
এসব ঘটনা প্রায় সময় ঘটে আসছে। এসব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে। কারন সামান্য বিষয়ে নিয়ে সংঘর্ষ মারামারি এই সভ্যতার যুগের কারো কাম্য নয়। আমাদের ছেলে মেয়েরা দেশ বিদেশ সহ বানিয়াচংয়ের বাহিরে বিভিন্ন কলেজ ভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে। তাদেরও সহপাঠীদের কাছে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য লজ্জিত হতে শোনা যায়।
আমার মেডিকেল পড়ুয়া কন্যা কে তার ভাইবা ডাক্তার ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে, আমার কন্যা বানিয়াচং বাড়ি বলায়, তখন সেই ডাক্তার সাহেব তিনি বলে ফেললেন তোমাদের বানিয়াচং তো মারামারির এলাকা। এই কথা শুনে আমার মেয়ে খুবই লজ্জা পেল। এতে বুঝাযায় মানুষ এখন সব খবর মূহুর্তে ই পেয়ে যায়। তাই এসব থেকে বেরিয়ে আসা একান্ত জরুরি।
আমাদের বানিয়াচং কিন্তু ইতিহাস ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ একটি জনপদ।
এই গ্রামে জন্মেছেন বাইসাইকেলে বিশ্ব ভ্রমন করা ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাস, বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনের মাস্টার দা সূর্য সেনের অন্যতম সহযোগী হেম সেন-সুশীল সেন, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, উপমহাদেশে প্রখ্যাত সাংবাদিক ও রাজনৈতিক সিরাজুল হোসেন খান, শহীদ বুদ্ধিজীবী সাইদুল হাসান, বাংলাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী সহ নাম জানা অনেক গুনিজনের জন্মভিটা বানিয়াচং গ্রামে। সেই গ্রামের খেলা কে কেন্দ্র করে একটি ছেলে রেফারির সাথে এমন আচরণ খুবই দুঃখ জনক।
আমরা বানিয়াচংয়ের মানুষ মনে করি যে ছেলেটা এই ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটিয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এবং সামাজিক ভাবে বানিয়াচংবাসী এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবেন। বানিয়াচংয়ের সামাজিক বিচারে সুনাম জেলা জুড়ে সমাদৃত।
আমার বিশ্বাস সম্মানিত রেফারি জনাব রফিক আলী ভাই আপনার পাশে সমগ্র বানিয়াচংবাসী আছেন, আপনার কষ্টে আমরা ব্যতিত। আমরা সবাই আপনার পাশে থেকে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার পাবেন এই প্রত্যাশা করি।
আসুন সবাই মিলে সুন্দর একটা বানিয়াচং গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করি।
লেখকঃ
সাংবাদিক ও প্রাক্তন ফুটবল খেলোয়াড়।