
হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ সড়কটি বর্তমানে চরম বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। সড়কের বেশিরভাগ অংশ ভেঙে বড় বড় খানা-খন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু পিচ নয়, অনেক জায়গায় পাথর, খোয়া ও বালি পর্যন্ত উঠে গেছে, যার ফলে অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের একমাত্র এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সংস্কারের অভাবে দিন দিন ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত বর্ষা মৌসুমে সড়কটির অধিকাংশ অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল। সেগুলোকে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে ছোট-বড় কয়েক হাজার যানবাহন চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। বানিয়াচং ভায়া জলসুখা পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে প্রায় ৭০টিরও বেশি বড় ভাঙন রয়েছে। এর ফলে একটি গাড়ি অন্য গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় এসব ভাঙন আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই গর্তগুলো বড় হয়ে যান চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।
যাত্রীদের দুর্ভোগ ও ক্ষোভ
বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ সড়কের এমন ভঙ্গুর অবস্থা দেখে স্থানীয় যাত্রী ও সাধারণ মানুষ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ওই সড়কে চলাচলকারী একজন যাত্রী বলেন, “এই রাস্তায় চলাচল করতে আমাদের খুব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রাস্তার বেহাল দশা দীর্ঘদিনের। এই ভঙ্গুর রাস্তার করুণ দশা দেখার যেন কেউ নেই। অসংখ্য জায়গায় খানা-খন্দকের সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে।”
যাত্রী তোফাজ্জ্বল মিয়া বলেন, “জরুরি প্রয়োজনে রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই সড়ক যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এখনই রাস্তার ভাঙনগুলো মেরামত করা না হলে এই সড়কে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণকে আরও ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হবে।”
কলেজের ছাত্র সুজন মিয়া জানান, “রাস্তার এই সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনের, কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। যাতায়াতে খুব কষ্ট পোহাতে হয়।”
প্রদীপ, মহিবুর ও মঈনউদ্দিন সহ আরও অনেকে বলেন, “একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি ভয়ংকর রূপ ধারণ করে এবং চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ে।”
প্রতিদিনের দুর্ঘটনা
ভুক্তভোগীরা জানান, গত সপ্তাহে একটি অটোরিকশা উল্টে রাস্তার পাশে ছিটকে পড়েছিল, যার ফলে শিশু ও মহিলাসহ প্রায় ৮ জন আহত হন। এমন দুর্ঘটনা এখন প্রতিদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
কর্তৃপক্ষের আশ্বাস
যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগের দৃশ্য দেখে এবং হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেনের সাথে আলাপ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ সড়কটি চলাচলের উপযোগী করে তোলার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ডাঃ সাখাওয়াত হাসান জীবন অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন আরও জানান, ২০১৭ সালে ১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এই সড়কের নির্মাণকাজ সমাপ্ত করেছিল। এরপর সড়কটি সংস্কারের প্রয়োজনে টেন্ডারও করা হয়। কিন্তু গত আগস্ট মাসে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থার কারণে কোনো ঠিকাদার ঝুঁকি নেবে ভেবে দরপত্র দাখিল করেননি। তবে তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু করা হবে।
এই সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে এবং দুর্ঘটনার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। কর্তৃপক্ষ কবে নাগাদ এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু করে সাধারণ মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।