সিলেট ০৭:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
News Title :
সবুজের ছায়ায় লাল-সবুজের খোঁজে:‎লক্ষ্মীবাওড় জলাবন গোয়াইনঘাটে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে লেঙ্গুড়া গ্রামবাসীর কঠোর হুঁশিয়ারি। সিলেট জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার কাজী মাহবুব উর রহমানকে ছাড়পত্র: নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ। বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির উদ্দিন আহমদ আর নেই: দক্ষিণ সুরমায় ১০০ বোতল ফেনসিডিলসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক করেছে পুলিশ। শুভ জন্মদিন এম এ মালেক: জীবন থেকে ঝরে গেল আরও একটি বছর, স্মৃতির পাতায় নতুন পালক। জাবিদুরের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন: হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার ও ফাঁসির দাবি কুলাউড়ায় পানিতে ডুবে ৫ বছরের শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু মার্শাল আর্ট “কিকবক্সীংয়ে“ আয়ানের ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন। ভূমি অধিকারসহ ১০ দফা দাবিতে চা-শ্রমিকদের ঐতিহাসিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত।সভাপতি সবুজ তাঁতি সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ দাস অলমিক ।

সবুজের ছায়ায় লাল-সবুজের খোঁজে:‎লক্ষ্মীবাওড় জলাবন

লক্ষ্মীবাওড় জলাবন (খরতির জঙ্গল) প্রবেশদ্বার ।



হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার এক অজপাড়াগাঁয়ে লুকিয়ে আছে এক বিস্ময়— লক্ষ্মীবাওড় জলাবন, যা স্থানীয়দের কাছে হরতি জঙ্গল নামেই পরিচিত। মিঠা পানির এই জলাবন যেন প্রকৃতির এক নিখুঁত ক্যানভাস। চারপাশের ঘন সবুজ আর পাখির কলতানে নীরবতা ভেদ করে এক স্বর্গীয় অভয়ারণ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বনের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা একটি নদীর ত্রিমুখী স্রোত এই জায়গাটিকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। লক্ষ্মীবাওড় শুধু একটি জলাবন নয়, এটি প্রকৃতির সৌন্দর্য আর রহস্যের এক অপার আধার। হিজল, করস কদম, খাগড়া সহ নানান জাতের উদ্ভিদ দেখতে পারবেন। আশা করি আপনাদের ভ্রমণ আরো রোমাঞ্চকর হবে।
‎আমার বন্ধুদের সঙ্গে বর্ষাকালের এক সোনালি সকালে আমাদের প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিল। নৌকায় চড়ে লক্ষ্মীবাওড়ের জলে ভেসে চলার অভিজ্ঞতা ছিল এককথায় মুগ্ধ করার মতো। চারপাশে বড় বড় গাছের শিকড় আর সবুজ পাতায় ঢাকা পরিবেশ এক অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করে। স্বচ্ছ জলে আকাশের প্রতিচ্ছবি, আর মাঝেমধ্যে ডানা ঝাপটানো পাখির মেলা—সবকিছুই প্রকৃতির বিশুদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দেয়।
‎লক্ষ্মীবাওড়ের জীববৈচিত্র্য ও রোমাঞ্চ
‎লক্ষ্মীবাওড়ে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ, যাদের অনেক নামই অজানা। এই বনের প্রতিটি গাছ যেন প্রকৃতির নিজস্ব ভাষায় গল্প শোনায়। সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো এখানকার পাখির মেলা। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ডাক এই জঙ্গলকে আরও বেশি জীবন্ত করে তোলে। তবে এখানকার সবচেয়ে রোমাঞ্চকর গল্পটি হলো বাঘ নিয়ে। লোকমুখে শোনা যায়, লক্ষ্মীবাওড়ে একসময় বাঘ ছিল। যদিও পূর্ণবয়স্ক বাঘ এখনো কেউ দেখেনি, তবে মেছো বাঘের বাচ্চার দেখা মিলেছে বলে শোনা যায়। এই গল্প এখানকার রোমাঞ্চকে যেন আরও বাড়িয়ে তোলে!
‎শুকনো মৌসুমে লক্ষ্মীবাওড় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ভিন্ন ধরনের হয়। তখন নৌকার বদলে মোটরবাইক, বাইসাইকেল, টমটম বা সিএনজিচালিত গাড়িতে ঘোরা যায়। শুকনো জমিতে গাছের ছায়ায় বসে প্রকৃতিকে অনুভব করা, নদীর ধারে হাঁটা কিংবা পাখির ডাকে মুগ্ধ হওয়া—সবই যেন প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

লক্ষ্মীবাওড় জলাবন (খরতির জঙ্গল) পাখিদের মেলা ।


‎আমি আর আমার বন্ধুরা প্রায়ই এখানে যাই—কখনো সপ্তাহে একবার, কখনো মাসে দুইবার, এমনকি কোনো মাসে চারবারও যাওয়া হয়। এখানকার পরিবেশ, প্রকৃতি আর নিস্তব্ধতা আমাকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্যের মাঝে এসে মনে হয়, আমিও যেন এর একটি অংশ। লক্ষ্মীবাওড় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মিঠাপানির জলাবন এবং পাখির অভয়ারণ্য। এখানে এসে বুঝি, প্রকৃতি কতটা দয়ালু আর প্রাণবন্ত হতে পারে। লাল-সবুজের গল্প শুধু আমাদের পতাকায় নয়, এই দেশের মাটির প্রতিটি কোণায়, প্রতিটি গাছে আর প্রতিটি নদীর স্রোতে মিশে আছে। লক্ষ্মীবাওড় যেন বাংলাদেশের সেই লুকিয়ে থাকা রত্ন, যা একবার দেখলে কখনো ভোলা যায় না।
‎লক্ষ্মীবাওড় ভ্রমণের পরিকল্পনা
‎লক্ষ্মীবাওড় জলাবন বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি অপূর্ব প্রাকৃতিক জলাশয়, যা তার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য নিয়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অপেক্ষা করে। সারা বছরই এই হাওরে ভ্রমণ করা যায়, তবে বর্ষার সময় এটি যেন জলে জেগে ওঠা এক স্বর্গরাজ্য হয়ে ওঠে। নতুন ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এখানে একটি একদিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা দেওয়া হলো:
‎১. কীভাবে যাবেন?
‎ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় যাওয়ার জন্য কয়েকটি বিকল্প রয়েছে:
‎ * বাসে: ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে হবিগঞ্জগামী দিগন্ত ও মর্ডান বাস মহাখালী থেকে হবিগঞ্জগামী এনা বাস পাবেন। আবার সিলেটগামী হানিফ শ্যামলী গ্রীনলাইন সহ যেকোন বাসে শায়েস্তাগঞ্জ নেমে বানিয়াচং আসতে পারেন। সময় লাগবে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা, ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা।
‎ * ট্রেনে: ঢাকা থেকে শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে ট্রেনে যেতে পারেন। ভাড়া ১২০-৩০০ টাকা (শোভন থেকে এসি)। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সিএনজি বা অটো রিকশায় বানিয়াচং পৌঁছাতে প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় লাগবে।
‎বানিয়াচং থেকে লক্ষ্মীবাওড় জলাবন (হরতি জঙ্গল):
‎বানিয়াচং সদরের বড় বাজার থেকে শুকনো মৌসুমে সিএনজি বা টমটম নিয়ে লক্ষ্মীবাওড় জলাবনে যেতে পারেন। বর্ষায় নৌকা যোগে যেতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগে এবং ভাড়া ৭০০-১০০০ টাকা (নৌকার আকার অনুযায়ী)।
‎২. থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা‎
‎হবিগঞ্জ শহরে: হোটেল রয়্যাল রিসোর্ট (ভাড়া: ১০০০-২০০০ টাকা), হোটেল প্যালেস ইন (ভাড়া: ৫০০-১৫০০ টাকা)। আর বেশ কয়েকটি ভাল মানের থাকার হোটেল আছে।
‎ * বানিয়াচংয়ে: ছোট গেস্ট হাউস, হোটেল আল-আমান বা স্থানীয় লোকজনের কাছে থাকার ব্যবস্থা পাওয়া যেতে পারে। আগে থেকে যোগাযোগ করে নিলে ভালো হয়। অথবা জেলা পরিষদের ডাকবাংলো তে থাকার ব্যবস্থা করা যাবে।তবে আগে থেকে যোগাযোগ করে যাওয়া ভাল।
‎ * খাওয়ার ব্যবস্থা:

  • বানিয়াচং বড় বাজারে: সকালে স্থানীয় বাজারে নাশতা (ডিম, পরোটা, সবজি) পাওয়া যায়। দুপুরের খাবারে ভর্তা, ভাজি আর হাওরের তাজা মাছ, শাক সবজি এবং দেশি মোরগ সহ নানান পদের ভর্তার সমাহার পাবেন এসব খাবার হোটেলে। জনপ্রতি খরচ ১০০-১৫০ টাকা বা খাবার অনুযায়ী দাম বাড়তে পারে।
    ‎ * হাওরে নৌকায়: যদি লক্ষ্মীবাওড় জলাবনে সারাদিন থাকেন, তবে নিজের সঙ্গে শুকনো খাবার বা স্থানীয় বাজার থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে যেতে পারেন। চা ও স্ন্যাকস হাওরপাড়ের দোকান থেকে কিনতে পারবেন।
    ‎৩. লক্ষ্মীবাওড় জলাবনে কী দেখবেন?
    * প্রকৃতি ও পাখির মেলা: বর্ষার সময় লক্ষ্মীবাওড় জলাবনে দূর-দূরান্ত থেকে জলচর পাখির আগমন ঘটে। গাঙচিল, বক, হাঁসের ঝাঁক দেখতে দেখতে আপনার সময় কেটে যাবে।
    ‎ * সৌন্দর্যের অভিজ্ঞতা: বিশাল জলরাশির মাঝখানে দাঁড়িয়ে নীল আকাশের প্রতিফলন, গাছের সারি আর শান্ত বাতাস আপনাকে মুগ্ধ করবে।
    * নৌকাভ্রমণ: হাওরের মাঝখানে গিয়ে নৌকায় বসে নির্জনতা উপভোগ করার অভিজ্ঞতা সত্যিই অনন্য।
    ‎ * মৎস্য শিকার: স্থানীয় জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য দেখার সুযোগ পাবেন। চাইলে তাদের সঙ্গে যোগও দিতে পারেন।
    ‎৪. একদিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা:
    ‎ * সকাল: ভোর ৬টায় বানিয়াচং থেকে রওনা দিয়ে নৌকায় লক্ষ্মীবাওড় জলাবনে পৌঁছান। সূর্যোদয়ের দৃশ্য উপভোগ করুন এবং সকালের চা পান করুন।
    ‎ * দুপুর: হাওরের নির্জনতায় বসে দুপুরের খাবার খেয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করুন।
    ‎ * বিকাল: বিকেলের দিকে পাখির ডাকে বিদায় জানিয়ে ফিরে আসুন।
    ‎৫. পর্যটকদের জন্য জরুরি টিপস:
    ‎ * ক্যামেরা এবং চার্জার নিতে ভুলবেন না।
    ‎ * বর্ষায় হাওরের
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

সবুজের ছায়ায় লাল-সবুজের খোঁজে:‎লক্ষ্মীবাওড় জলাবন

সবুজের ছায়ায় লাল-সবুজের খোঁজে:‎লক্ষ্মীবাওড় জলাবন

সময় ০৫:২০:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

লক্ষ্মীবাওড় জলাবন (খরতির জঙ্গল) প্রবেশদ্বার ।



হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার এক অজপাড়াগাঁয়ে লুকিয়ে আছে এক বিস্ময়— লক্ষ্মীবাওড় জলাবন, যা স্থানীয়দের কাছে হরতি জঙ্গল নামেই পরিচিত। মিঠা পানির এই জলাবন যেন প্রকৃতির এক নিখুঁত ক্যানভাস। চারপাশের ঘন সবুজ আর পাখির কলতানে নীরবতা ভেদ করে এক স্বর্গীয় অভয়ারণ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বনের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা একটি নদীর ত্রিমুখী স্রোত এই জায়গাটিকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। লক্ষ্মীবাওড় শুধু একটি জলাবন নয়, এটি প্রকৃতির সৌন্দর্য আর রহস্যের এক অপার আধার। হিজল, করস কদম, খাগড়া সহ নানান জাতের উদ্ভিদ দেখতে পারবেন। আশা করি আপনাদের ভ্রমণ আরো রোমাঞ্চকর হবে।
‎আমার বন্ধুদের সঙ্গে বর্ষাকালের এক সোনালি সকালে আমাদের প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিল। নৌকায় চড়ে লক্ষ্মীবাওড়ের জলে ভেসে চলার অভিজ্ঞতা ছিল এককথায় মুগ্ধ করার মতো। চারপাশে বড় বড় গাছের শিকড় আর সবুজ পাতায় ঢাকা পরিবেশ এক অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করে। স্বচ্ছ জলে আকাশের প্রতিচ্ছবি, আর মাঝেমধ্যে ডানা ঝাপটানো পাখির মেলা—সবকিছুই প্রকৃতির বিশুদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দেয়।
‎লক্ষ্মীবাওড়ের জীববৈচিত্র্য ও রোমাঞ্চ
‎লক্ষ্মীবাওড়ে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ, যাদের অনেক নামই অজানা। এই বনের প্রতিটি গাছ যেন প্রকৃতির নিজস্ব ভাষায় গল্প শোনায়। সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো এখানকার পাখির মেলা। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ডাক এই জঙ্গলকে আরও বেশি জীবন্ত করে তোলে। তবে এখানকার সবচেয়ে রোমাঞ্চকর গল্পটি হলো বাঘ নিয়ে। লোকমুখে শোনা যায়, লক্ষ্মীবাওড়ে একসময় বাঘ ছিল। যদিও পূর্ণবয়স্ক বাঘ এখনো কেউ দেখেনি, তবে মেছো বাঘের বাচ্চার দেখা মিলেছে বলে শোনা যায়। এই গল্প এখানকার রোমাঞ্চকে যেন আরও বাড়িয়ে তোলে!
‎শুকনো মৌসুমে লক্ষ্মীবাওড় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ভিন্ন ধরনের হয়। তখন নৌকার বদলে মোটরবাইক, বাইসাইকেল, টমটম বা সিএনজিচালিত গাড়িতে ঘোরা যায়। শুকনো জমিতে গাছের ছায়ায় বসে প্রকৃতিকে অনুভব করা, নদীর ধারে হাঁটা কিংবা পাখির ডাকে মুগ্ধ হওয়া—সবই যেন প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

লক্ষ্মীবাওড় জলাবন (খরতির জঙ্গল) পাখিদের মেলা ।


‎আমি আর আমার বন্ধুরা প্রায়ই এখানে যাই—কখনো সপ্তাহে একবার, কখনো মাসে দুইবার, এমনকি কোনো মাসে চারবারও যাওয়া হয়। এখানকার পরিবেশ, প্রকৃতি আর নিস্তব্ধতা আমাকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্যের মাঝে এসে মনে হয়, আমিও যেন এর একটি অংশ। লক্ষ্মীবাওড় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মিঠাপানির জলাবন এবং পাখির অভয়ারণ্য। এখানে এসে বুঝি, প্রকৃতি কতটা দয়ালু আর প্রাণবন্ত হতে পারে। লাল-সবুজের গল্প শুধু আমাদের পতাকায় নয়, এই দেশের মাটির প্রতিটি কোণায়, প্রতিটি গাছে আর প্রতিটি নদীর স্রোতে মিশে আছে। লক্ষ্মীবাওড় যেন বাংলাদেশের সেই লুকিয়ে থাকা রত্ন, যা একবার দেখলে কখনো ভোলা যায় না।
‎লক্ষ্মীবাওড় ভ্রমণের পরিকল্পনা
‎লক্ষ্মীবাওড় জলাবন বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় অবস্থিত। এটি একটি অপূর্ব প্রাকৃতিক জলাশয়, যা তার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য নিয়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অপেক্ষা করে। সারা বছরই এই হাওরে ভ্রমণ করা যায়, তবে বর্ষার সময় এটি যেন জলে জেগে ওঠা এক স্বর্গরাজ্য হয়ে ওঠে। নতুন ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এখানে একটি একদিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা দেওয়া হলো:
‎১. কীভাবে যাবেন?
‎ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় যাওয়ার জন্য কয়েকটি বিকল্প রয়েছে:
‎ * বাসে: ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে হবিগঞ্জগামী দিগন্ত ও মর্ডান বাস মহাখালী থেকে হবিগঞ্জগামী এনা বাস পাবেন। আবার সিলেটগামী হানিফ শ্যামলী গ্রীনলাইন সহ যেকোন বাসে শায়েস্তাগঞ্জ নেমে বানিয়াচং আসতে পারেন। সময় লাগবে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা, ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা।
‎ * ট্রেনে: ঢাকা থেকে শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে ট্রেনে যেতে পারেন। ভাড়া ১২০-৩০০ টাকা (শোভন থেকে এসি)। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সিএনজি বা অটো রিকশায় বানিয়াচং পৌঁছাতে প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় লাগবে।
‎বানিয়াচং থেকে লক্ষ্মীবাওড় জলাবন (হরতি জঙ্গল):
‎বানিয়াচং সদরের বড় বাজার থেকে শুকনো মৌসুমে সিএনজি বা টমটম নিয়ে লক্ষ্মীবাওড় জলাবনে যেতে পারেন। বর্ষায় নৌকা যোগে যেতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগে এবং ভাড়া ৭০০-১০০০ টাকা (নৌকার আকার অনুযায়ী)।
‎২. থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা‎
‎হবিগঞ্জ শহরে: হোটেল রয়্যাল রিসোর্ট (ভাড়া: ১০০০-২০০০ টাকা), হোটেল প্যালেস ইন (ভাড়া: ৫০০-১৫০০ টাকা)। আর বেশ কয়েকটি ভাল মানের থাকার হোটেল আছে।
‎ * বানিয়াচংয়ে: ছোট গেস্ট হাউস, হোটেল আল-আমান বা স্থানীয় লোকজনের কাছে থাকার ব্যবস্থা পাওয়া যেতে পারে। আগে থেকে যোগাযোগ করে নিলে ভালো হয়। অথবা জেলা পরিষদের ডাকবাংলো তে থাকার ব্যবস্থা করা যাবে।তবে আগে থেকে যোগাযোগ করে যাওয়া ভাল।
‎ * খাওয়ার ব্যবস্থা:

  • বানিয়াচং বড় বাজারে: সকালে স্থানীয় বাজারে নাশতা (ডিম, পরোটা, সবজি) পাওয়া যায়। দুপুরের খাবারে ভর্তা, ভাজি আর হাওরের তাজা মাছ, শাক সবজি এবং দেশি মোরগ সহ নানান পদের ভর্তার সমাহার পাবেন এসব খাবার হোটেলে। জনপ্রতি খরচ ১০০-১৫০ টাকা বা খাবার অনুযায়ী দাম বাড়তে পারে।
    ‎ * হাওরে নৌকায়: যদি লক্ষ্মীবাওড় জলাবনে সারাদিন থাকেন, তবে নিজের সঙ্গে শুকনো খাবার বা স্থানীয় বাজার থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে যেতে পারেন। চা ও স্ন্যাকস হাওরপাড়ের দোকান থেকে কিনতে পারবেন।
    ‎৩. লক্ষ্মীবাওড় জলাবনে কী দেখবেন?
    * প্রকৃতি ও পাখির মেলা: বর্ষার সময় লক্ষ্মীবাওড় জলাবনে দূর-দূরান্ত থেকে জলচর পাখির আগমন ঘটে। গাঙচিল, বক, হাঁসের ঝাঁক দেখতে দেখতে আপনার সময় কেটে যাবে।
    ‎ * সৌন্দর্যের অভিজ্ঞতা: বিশাল জলরাশির মাঝখানে দাঁড়িয়ে নীল আকাশের প্রতিফলন, গাছের সারি আর শান্ত বাতাস আপনাকে মুগ্ধ করবে।
    * নৌকাভ্রমণ: হাওরের মাঝখানে গিয়ে নৌকায় বসে নির্জনতা উপভোগ করার অভিজ্ঞতা সত্যিই অনন্য।
    ‎ * মৎস্য শিকার: স্থানীয় জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য দেখার সুযোগ পাবেন। চাইলে তাদের সঙ্গে যোগও দিতে পারেন।
    ‎৪. একদিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা:
    ‎ * সকাল: ভোর ৬টায় বানিয়াচং থেকে রওনা দিয়ে নৌকায় লক্ষ্মীবাওড় জলাবনে পৌঁছান। সূর্যোদয়ের দৃশ্য উপভোগ করুন এবং সকালের চা পান করুন।
    ‎ * দুপুর: হাওরের নির্জনতায় বসে দুপুরের খাবার খেয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করুন।
    ‎ * বিকাল: বিকেলের দিকে পাখির ডাকে বিদায় জানিয়ে ফিরে আসুন।
    ‎৫. পর্যটকদের জন্য জরুরি টিপস:
    ‎ * ক্যামেরা এবং চার্জার নিতে ভুলবেন না।
    ‎ * বর্ষায় হাওরের