
নবীগঞ্জে ফিসারির পাহাড়াদার জাহাঙ্গীরের আত্মহত্যাকে নিয়ে চলছে নাটকিয়তা। তিনটি তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন ও সুরতহাল রিপোর্ট, ময়না তদন্ত ও ডিএনও রিপোটে হত্যার কোন প্রমান না মিললেও সুচতুর বাদীনি বারবার নারাজি দিয়ে সাংবাদিক পরিবার’কে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তৎকালীন সময় নবীগঞ্জ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। অপর দিকে আদালতে বাদীর দায়েরকৃত হত্যা মামলাটি নিয়ে এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তৎকালীন সময়ে বিশাল মানববন্ধন করেছিলেন এলাকাবাসী ও সাংবাদিক সমাজ।
ওই মানববন্ধন থেকে মামলাটি মিথ্যা সাজানো বলে দাবী করে অহেতুক সাংবাদিক পরিবারকে হয়রানী না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বাদীনির আক্রোশের শিকার নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক শ্যামল সিলেট এবং আজকের হবিগঞ্জ পত্রিকার নবীগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ সরওয়ার শিকদার ও তার চাচা মিজানুর রহমান শিকদারসহ সাংবাদিক পরিবারের ১৪ জন। পুর্ব আক্রোশে আত্মহত্যার ঘটনাকে হত্যা মামলা সাজিয়ে আদালতে মামলা করেন জাহাঙ্গীর মিয়ার ১ম স্ত্রী রোজিনা বেগম।
উল্লেখ্য যে নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনের সাবেক এমপি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু’র মালিকাধীন ফিশারী নবীগঞ্জ উপজেলার গুঙ্গিয়াজুড়ি হাওর এলাকা থেকে ২০২১ সালের ২০ জুলাই বিকালে জাহাঙ্গীর মিয়ার (৩৫) ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
এব্যাপারে নবীগঞ্জ থানায় পুলিশ একটি অপমৃত্যু মামলা নং-১২৫৯ রেকর্ড করেন।
ঘটনার প্রায় একমাস পরে পুর্ব বিরোধের সুত্রধরে নিহত জাহাঙ্গীর মিয়ার ১ম স্ত্রী রোজিনা বেগম হবিগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে সিআর-২৮৩/২১ (নবী) দায়ের করেন।
তিনি মামলায় বলেন, ঐদিন রাতে ১৪জন আসামিরা হত্যা করে তার স্বামীর লাশ রাতে থাকার ঘরে ঝুলিয়ে রাখে।
আদালত মামলাটি তদন্ত এর জন্য প্রথমে নবীগঞ্জ থানা পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়, তারা তদন্ত করে ময়না তদন্ত রিপোর্ট ও ডিএনও টেষ্টের আলোকে ফাইনাল রিপোর্টে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করেন।
বাদী নাখোশ হয়ে পুণঃরায় নারাজি প্রদান করেন, তখন আদালত মামলাটি হবিগঞ্জ পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের জন্য প্রেরণ করেন।
পিবিআই দীর্ঘ এক বছর তদন্ত করে পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শরীফ মোঃ রেজাউল করিম তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে প্রেরন করেন।
এতে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করেন। বাদীনি আবারও নাখোশ হন। তিনি আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করেন। বিজ্ঞ আদালত সুষ্টু তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সিআইডিকে প্রদান করেন।
তৃতীয় দফায় সিআইডি তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ নয়ন মিয়া আদালতে এক বছর তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন, জাহাঙ্গীর গলায় ফাসঁ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে মর্মে উল্লেখ্য করে উক্ত সাংবাদিক পরিবারের সম্পৃক্ততার কোন তথ্য প্রমানাধি না পাওয়ায় মামলার দায় থেকে তাদেরকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য আবেদনসহ প্রতিবেদন দেন ।
মামলার বিগত তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি মিজানুর রহমান শিকদার গংদের সাথে ভিকটিম মৃত জাহাঙ্গীর মিয়া’র বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পুর্ব বিরোধ ও মামলা মোকদ্দমা ছিল। আত্মহত্যার আগে জাহাঙ্গীর মিয়া তার চাচাতো বোন ইয়াসমিন বেগমকে ২য় বিবাহ করেন।
২য় স্ত্রী বিবাহের কিছু দিনপর ইয়াসমিন বেগম সৌদি আরব প্রবাসে চলে যায়। ২য় স্ত্রীর সাথে মৃত জাহাঙ্গীর মিয়ার ফোনে কথাবার্তা হতো। ঘটনার সময় প্রবাসী স্ত্রীর সাথে মৃত জাহাঙ্গীরের মান অভিমান চলছিল।
এবারও তদন্ত প্রতিবেদনে বাদীনি রোজিনা বেগম ক্ষিপ্ত হন,তিনি তৃতীয় দফা নারাজী পিটিশন দাখিল করেন, এর প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত বর্তমানে ডিবি হবিগঞ্জকে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন। বর্তমানে হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছেন।
এব্যাপারে মামলার অভিযুক্ত আসামি মিজানুর রহমান শিকদার বলেন, আমাদের উপর আক্রোশমুলক একটি আত্মহত্যাকে হত্যা মামলা সাজিয়ে আমার পরিবারে লোকজনসহ ১৪ জনকে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনটি সংস্থা তদন্ত করেছে, ময়না তদন্ত রিপোর্ট, ডিএনও রিপোর্টে কোন কিছুতেই হত্যার আলামত মিলে নাই।
হয়রানি করার জন্য এসব করা হচ্ছে আমরা সঠিক বিচার চাই। এছাড়া পুলিশের রিপোর্টে মৃত্যুর পুর্ব মুহুর্তে জাহাঙ্গীর মিয়া তার প্রবাসী স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারের সাথে ভিডিও কলে আলাপরত ছিল বলে উল্লেখ্য রয়েছে। কিন্তু মোবাইল বিকল হওয়ায় সেই আলামত জব্দ করা যায়নি।
বাদিনী রোজিনা বেগমের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হলে তার মোবাই নাম্বারটি বন্ধ পওয়া যায়। এইজন্য তার বক্তব্য জানা যায়নি।
এব্যাপারে হবিগঞ্জ ডিবির ওসি একেএম শামীম হাসান বলেন, মামলাটি খুবই সেনসেটিভ, আমরা মামলাটির সার্বিক বিষয় তদন্ত করছি। এখন তদন্তের বাহিরে কিছু বলা যাবে না। এদিকে বাদীনি বার বার নারাজী প্রদান করে উক্ত সাংবাদিক পরিবারকে হয়রানী করায় এলাকায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
উল্লেখ্য, মৃত জাহাঙ্গীর মিয়া ঘটনার প্রায় ৩ মাস পুর্ব থেকে সাবেক এমপির ফিশারীতে পাহাড়াদার হিসেবে কাজ করে আসছিল। জাহাঙ্গীর কুর্শি ইউপির কুর্শি গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে।
সে ওই ফিশারীর পাড়ে সফিক মিয়ার একটি ঘরে বসবাস করে আসছিল। সাবেক এমপি তাহার ফিশারী রক্ষনাবেক্ষনের কাজে নিয়োজিত পাহাড়াদারদের জন্য একটি ঘর নির্মাণ করেন। ওই ঘরে থাকতেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু ২০ জুলাই মঙ্গলবার সকালে জাহাঙ্গীরের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ওই দিনই কুর্শি গ্রামের লাল মিয়া লেবুর ছাড়া নিয়ে বেলা ৩ টায় বাউসা ইউপির গুঙ্গিয়াজুড়ি হাওরে সাবেক এমপির ফিশারীতে যান। তিনি সফিক মিয়ার ঘর তালা বদ্ধ দেখে চলে যান নতুন ঘরে।
সেখানে গিয়ে জাহাঙ্গীরের ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। নির্জন স্থানে কেউ তার চিৎকার শুনতে পায়নি। ঘটনাটি তার মালিক সাবেক এমপি মুনিম চৌধুরী বাবু’কে জানান। খবর পেয়ে তৎকালীন নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ ডালিম আহমদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল যান। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তৎকালীন বাহুবলের সার্কেল এসপি আবুল খায়ের। পুলিশ মৃত জাহাঙ্গীরের পাশে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।
পরে জাহাঙ্গীরের মৃতদেহ’র ছুরতহাল তৈরী করে হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরন করেছেন। এব্যাপারে নবীগঞ্জ থানায় অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়। পরপর ৩টি সংস্থা তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করে বিবাদী সিনিয়র সাংবাদিক মোঃ সরওয়ার শিকদার ও তার পরিবারের সদস্যদের কোন প্রকার সংশ্লিষ্ট পাওয়া যায়নি মর্মেও উল্লেখ্য করেছেন।
তবুও বাদীনি একটি বিশেষ কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় বার বার নারাজি দিয়ে সাংবাদিক পরিবারকে হয়রানীর পাশাপাশি তদন্ত কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করছেন বলে মনে করছেন সুশীল সমাজ।