হৃদয় খান।

আদর্শ জাতি গঠনের কারিগর: দায়িত্বশীল শিক্ষক
“দায়িত্বশীল শিক্ষকরাই আদর্শ জাতি গঠনের কারিগর।”—এই চিরন্তন সত্যকে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি আমার শিক্ষা জীবনে। বিশেষ করে বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজ-এ অধ্যয়নকালে আমার শিক্ষাগুরুদের মধ্যে এই দায়িত্বশীলতার প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছি।
বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজে প্রবেশ
সালটা ছিল ২০১৬। মাধ্যমিক পাসের পর উচ্চশিক্ষার জন্য যখন প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন উত্তর বানিয়াচংয়ে সদ্য প্রতিষ্ঠিত বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজ-এ (২০১১ সালে যার যাত্রা শুরু) ভর্তি হওয়ার সুযোগ আসে। স্থানীয়ভাবে উত্তর বানিয়াচংয়ের দানশীল মানুষ এবং ২নং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান খান (ধন মিয়া)-এর গুরুত্বপূর্ণ অবদানে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও, বাবার অনুপ্রেরণায় আমি এই কলেজের পঞ্চম ব্যাচের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে সর্বপ্রথম ভর্তি হই।
ভর্তির প্রথম দিনেই পরিচয় হয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক শ্রদ্ধেয় আমিরুল ইসলাম স্যারের সাথে। তাঁর আন্তরিক ব্যবহার ও সাধুবাদ জানানোর ভঙ্গিটি শুরুতেই আমার মন জয় করে নেয়। কলেজের চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মনোরম পরিবেশও ভালো লাগার জন্ম দেয়।
বাংলা ম্যাডামের প্রজ্ঞা ও আদর্শ,তখন সবার মুখে মুখে কেবল একজন শিক্ষিকার নামই শোনা যেত— “বাংলা ম্যাডাম”। তাঁর নাম জানার আগেই তাঁকে দেখার ও ক্লাস করার তীব্র আগ্রহ জন্মেছিল। অবশেষে কলেজের উদ্বোধনী ক্লাসে তাঁর আগমন ঘটল।
বক্তব্যের শুরুতেই তিনি গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক ও সঠিক পথে চলার দিকনির্দেশনা দিলেন। তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যে আমি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে, মনোযোগ ক্লাসে ফিরে আসে এবং তাঁর প্রতিটা ক্লাস নিয়মিত করতে শুরু করি।
বাংলা ম্যাডামের ক্লাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল— শ্রেণিকক্ষে তিনি সবার ঊর্ধ্বে গুরুত্ব দিতেন নৈতিকতা, সত্যবাদিতা, ন্যায়বোধ ও দায়িত্বশীল আচরণের ওপর। তিনি কখনোই ভালো ফলাফল দিয়ে শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করতেন না।
তাঁর কাছে একজন আদর্শ শিক্ষার্থীর পরিচয় ছিল বিনয়, ন্যায়বোধ, সত্যবাদিতা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। এটা ছিল এক সম্পূর্ণ ভিন্ন ও শ্রদ্ধার জায়গা।
তাঁর পড়ানোর প্রতিটি ভাষায় যেন সুরের মাধুর্য লেগে থাকতো। মুগ্ধ না হয়ে থাকার কোনো উপায় ছিল না। একজন শিক্ষক কতটা দায়িত্ব নিয়ে একজন সন্তানের মতো তাঁর শিক্ষার্থীকে সঠিক পথ দেখাতে পারেন, তা তিনি ভালোভাবেই জানতেন।
সৎ পরামর্শ দিয়ে যারা এগিয়েছে, তারা সফল হতে পেরেছে। তাঁকে সামন থেকে দেখে রাগী মনে হলেও, তিনি ছিলেন অত্যন্ত নরম মনের একজন মানুষ।
অন্যান্য শিক্ষাগুরুর অবদান,বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজে আমি একাধিক দায়িত্বশীল ও আদর্শ শিক্ষাগুরু পেয়েছি, যাদের প্রতিটি কথা আমাদের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
শ্রদ্ধেয় রনজিত কুমার দাশ স্যার অর্থনীতিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সহজভাবে ভেঙে ভেঙে বোঝাতেন।
ইংরেজির প্রভাষক শ্রদ্ধেয় জসিম উদ্দিন স্যার শুধু ভালো পড়াননি, তিনি শিক্ষার্থীদের মনে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন। কিভাবে ভালো ব্যবহার ও আচরণের মাধ্যমে সমাজে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়, সেই কৌশলও তিনি শিখিয়ে যাচ্ছেন।
পূর্ণিমা ভট্টাচার্য ম্যাডাম শিক্ষার্থীদের সাথে এমন বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতেন যে, তাঁর পড়ানোর ভাষা ও মাধুর্য নিয়মিত একজন শিক্ষার্থীকে ক্লাসে মনোযোগী হতে সহায়তা করত।
মিতালি রানী হুড় ম্যাডাম ক্লাসে সবার পড়াশোনা আদায় করে নিতেন। তাঁর পড়ানোর ভাষা ছিল সহজ এবং সমাজবিজ্ঞানকে কিভাবে সহজে আয়ত্ত করা যায়, সেই কৌশল তিনি নিয়মিত শিখিয়ে যাচ্ছেন।
নিঃস্বার্থ অবদান ও কৃতজ্ঞতা, এই দায়িত্বশীল শিক্ষকরাই নিরলসভাবে আদর্শ জাতি গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছেন। এতে তাঁদের ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ জড়িয়ে নেই; বরং তাঁরা নিঃস্বার্থভাবে আমাদের কল্যাণে নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের বিকাশের প্রতিটি ধাপে তাঁদের এই অবদান অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।
আসলে, তাঁরা চান— শিক্ষার্থীরা যেন সফলতা অর্জন করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়। যখন নিজে শিক্ষকতা করছি, তখন বুঝতে পারছি যে, একজন অভিভাবক তাঁর সন্তানের উন্নতিতে যতটুকু খুশি হন, এর চেয়েও বেশি খুশি হন একজন শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীর সাফল্যে।
তাঁদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ করা সম্ভব নয়, কোনোভাবেই না। এই দায়িত্বশীল শিক্ষাগুরুরা আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন চিরকাল। আজীবন তাঁদের প্রতি আমাদের সম্মান ও কৃতজ্ঞতা থাকুক। তাঁদের অবদান চিরকাল বেঁচে থাকুক আমাদের অন্তরে।
শিক্ষার্থী (৫ম ব্যাচ)
বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজ