সিলেট ০৬:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫
News Title :
‎সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় গরু-মহিষের চোরাচালান আটক: বিজিবি’র সাফল্য ‎সখীপুরে মুসলিম জুয়েলার্সকে ১ লাখ টাকা জরিমানা ‎ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে হবিগঞ্জে আইনজীবীদের মানববন্ধন ‎টাঙ্গাইল সদরে চাড়াবাড়ি এস ডি এস ব্রীজের পশ্চিম অংশ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন মৃতের স্ত্রী হত্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিক পরিবারকে হয়রানি, তদন্ত প্রতিবেদনের উপর তিনবার নারাজি ॥ ‎চট্টগ্রামের উদয়ন এক্সপ্রেস মোগলাবাজারে লাইনচ্যুত: রেলপথে ব্যাপক শিডিউল বিপর্যয়‎ ‎গোয়াইনঘাটে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ, সার ও কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ ‎তামাবিল স্থলবন্দর পরিদর্শন করলেন কাস্টমস কমিশনার‎ ‎সিলেটের জৈন্তাপুরে আসামপাড়া আদর্শ বালু পাথর ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন: মানিক আহমেদ সভাপতি, শাহজাহান মিয়া সাধারণ সম্পাদক ‎ক্লাসে টিকটক ভিডিও: নবীগঞ্জে তিন শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার

‎টাঙ্গাইল জেলা: ঐতিহ্য, শিল্প ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য মিশেল

টাংগাইলে মির্জাপুর মহেরা জমিদার বাড়ি। ছবি- সংগৃহিত।


‎টাঙ্গাইল, বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের এক সমৃদ্ধ জেলা, তার নিজস্ব ঐতিহ্য, মনোমুগ্ধকর শিল্পকর্ম এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সুপরিচিত। এই জেলার প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে আছে ইতিহাস, সংস্কৃতি আর উদ্ভাবনের ছোঁয়া, যা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের মুগ্ধ করে তোলে। বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়িসহ তিন পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
‎টাংগাইলের শাড়ী, চমচম, মধুপুরের আনারস এগুলো বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ও সুপরিচিত।
‎ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের তালিকায় বাংলাদেশের অন্যতম জেলা টাংগাইল। ভ্রমণ পিপাসুদের সুবিধার্থে নিচে জেলার বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো দেয়া হল।
‎টাঙ্গাইলের প্রধান আকর্ষণগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
বিশ্বখ্যাত টাঙ্গাইল শাড়ি
‎টাঙ্গাইল শাড়ি শুধু একটি পোশাক নয়, এটি বুনন শিল্পের এক অনবদ্য উদাহরণ। এর সূক্ষ্ম বুননশৈলী, আকর্ষণীয় নকশা এবং নান্দনিক সৌন্দর্য এটিকে সারা বিশ্বে পরিচিতি এনে দিয়েছে। প্রতিটি টাঙ্গাইল শাড়ি যেন হাতে বোনা এক একটি শিল্পকর্ম, যা বাঙালি নারীর সাজে যোগ করে এক বিশেষ মর্যাদা। এই শাড়ি তাঁতিদের শত বছরের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার প্রতীক।
স্বাদে অতুলনীয় পোড়াবাড়ীর চমচম

টাঙ্গাইল শাড়িসহ তিন পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় । ছবি-সংগৃহিত ।


‎টাঙ্গাইল বললে যে মিষ্টির কথা প্রথমে মনে আসে, তা হলো পোড়াবাড়ীর চমচম। এই মিষ্টি তার অনন্য স্বাদ এবং নরম, রসালো গঠনের জন্য বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত মিষ্টি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই চমচম তার ঐতিহ্যবাহী স্বাদ ধরে রেখেছে, যা টাঙ্গাইল ভ্রমণের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভ্রমণ পিপাসুরা টাংগাইলে আসলে চমচমের স্বাদ নিতে ভুলেন না। সাথে করে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের জন্য উপহার হিসেবে চমচম নিয়ে যান।
‎ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি ও স্থাপত্য নিদর্শন
‎টাঙ্গাইল জেলা ইতিহাসের এক সমৃদ্ধ ভাণ্ডার। এখানে ছড়িয়ে আছে বেশ কিছু ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি এবং স্থাপত্য নিদর্শন যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
‎ মির্জাপুর-মহেড়া জমিদার বাড়ি
‎বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী এবং অন্যতম সংরক্ষিত জমিদার বাড়ি। উনিশ শতকে নির্মিত এই স্থাপনা বর্তমানে একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
*‎মহেড়া জমিদার বাড়ির বিস্তারিত
‎প্রায় ১১.৭৪ একর জমির ওপর বিস্তৃত এই জমিদার বাড়িটি তার স্থাপত্যশৈলী এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এতে রয়েছে:
‎ * তিনটি প্রধান ভবন: এই ভবনগুলো জমিদার পরিবারের বসবাসের মূল অংশ ছিল।
‎ * কাচারি ঘর: জমিদারি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হতো।
‎ * নায়েব সাহেবের ঘর ও গোমস্তাদের ঘর: জমিদারির বিভিন্ন কর্মচারী ও কর্মকর্তার থাকার ব্যবস্থা ছিল।
‎ * মন্দির: জমিদার বাড়ির নিজস্ব উপাসনালয়।
‎ * দাস-দাসীদের থাকার ঘর: কাজের লোকেদের জন্য নির্ধারিত স্থান।
‎ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
‎১৮৯০ সালের পূর্বে জমিদাররা এই অঞ্চলে এসে তাদের জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের শাসনকালে নির্মিত এই বাড়িটি স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে সংরক্ষিত ও সু-রক্ষণাবেক্ষণকৃত জমিদার বাড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
‎অনন্য বৈশিষ্ট্য
‎মহেড়া জমিদার বাড়ির প্রাকৃতিক ও আধ্যাত্মিক পরিবেশও এর আকর্ষণ বাড়িয়েছে:
‎ * শ্মশান কালী মন্দির: জমিদার বাড়ির উত্তর পাশে এই মন্দিরটি অবস্থিত।
‎ * বিশাখা সাগর: দক্ষিণ পাশে রয়েছে বিশাখা সাগর নামে একটি বিশাল পুকুর, যা জমিদার বাড়ির সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
‎পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে মহেড়া জমিদার বাড়ি
‎এই জমিদার বাড়িটি পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান, যেখানে জমিদারদের জীবনযাত্রা এবং সে সময়ের স্থাপত্যশৈলী সম্পর্কে জানতে পারা যায়। মহেড়া জমিদার বাড়ি শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নয়, এটি স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
* দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি: একসময়কার প্রভাবশালী জমিদারদের বাসস্থান, যা তাদের জীবনযাত্রার এক ঝলক দেখায়।
‎ * হেমনগর জমিদার বাড়ি: এর আকর্ষণীয় স্থাপত্য এবং বিশাল কাঠামো দর্শকদের মুগ্ধ করে।

ধনবাড়ী নবাব প্যালেস এখনও কালের সাক্ষী হয়ে আছে ।ছবি-সংগৃহিত ।

ধনবাড়ী নবাব প্যালেস: একসময়কার ক্ষমতাধর নবাবদের স্মৃতিচিহ্ন, যা এর ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য সুপরিচিত। এখানেই থাকার জন্য প্যালেসে ভেতরে সুব্যবস্থা আছে। রাত্রি যাপন করতে চাইলে আগে থেকে যোগাযোগ করে যাওয়াই ভাল।
‎ * ২০১ গম্বুজ মসজিদ: গোপালপুর উপজেলায় সাম্প্রতিককালে নির্মিত এই বিশাল মসজিদটি তার অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য পর্যটকদের কাছে একটি নতুন আকর্ষণ।
‎এই স্থানগুলো অতীত দিনের গল্প বলে এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটায়।
*যুমান সেতু
বাংলাদেশ প্রথম দীর্ঘ যুমান বহুমুখী সেতু খরস্রোতা যমুনা নদীর উপর নির্মিত। যুমান সেতু দেখতে প্রতিদিন মানুষ জন ছুটে যান। ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের তালিকায় আছে যমুনা সেতু দেখা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য লীলাভূমি মধুপুর গড়। নানা প্রজাতির পশু পাখি সহ আছে অসংখ্য বানর। ছবি-সংগৃহিত ।

*‎মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
‎শুধু ঐতিহাসিক স্থানই নয়, টাঙ্গাইল তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও বিখ্যাত। বিশেষ করে, মধুপুরের রাবার বাগান এবং মধুপুর গড় বা বন, এখানেই প্রতিদিন শতশত ভ্রমণ পিপাসুদের ঢল নামে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য লীলাভূমি বলা চলে মধুপুর গড় কে। নানা প্রজাতির পশু পাখি সহ নানান প্রাণী আছে এখানে। পাশাপাশি হরেক রকমের গাছপালার সমাহার এই বনে।
‎যদিও অন্যান্য পশুপাখি না দেখা গেলেও বানর মানুষের সংস্পর্শে আসে। লোকজন নিজ হাতে খাবার দেয় বানরগুলো কে। এই মধুপুর গড় মানুষের কাছে দিনদিন আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
‎চারপাশের সবুজ প্রকৃতি টাঙ্গাইলকে একটি আদর্শ পর্যটন গন্তব্য করে তোলে। এখানকার শান্ত ও সবুজে ঘেরা পরিবেশ শহুরে কোলাহল থেকে দূরে এক প্রশান্তির হাতছানি দেয়। পরিবার পরিজনদের নিয়ে প্রতিদিন মানুষ ছুটে যায় মধুপুর বনে। ছুটি দিনে বনভোজন সহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠান মালা হয়ে থাকে বনের নির্ধারিত স্থানে।
*ঐতিহ্যবাহী বস্ত্রশিল্পের অতীত গৌরব
‎টাঙ্গাইল একসময় বাপ্তা, হাম্মাম এবং অন্যান্য পাঁচমিশালী বস্ত্রের জন্য সুপরিচিত ছিল। যদিও বর্তমানে টাঙ্গাইল শাড়ির প্রভাব বেশি, তবুও এই জেলার বস্ত্রশিল্পের একটি দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে, যা এর ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে।
*‎সমৃদ্ধ কৃষি খাত
‎কৃষি টাঙ্গাইল জেলার অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এখানকার উর্বর ভূমি ধান, পাট, সরিষা এবং বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি উৎপাদনে সহায়ক। এই কৃষিজাত পণ্যগুলো জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এবং স্থানীয় জীবনযাত্রার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
‎টাঙ্গাইল জেলা তার সংস্কৃতি, শিল্প, ইতিহাস এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য সমন্বয়। যারা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য টাঙ্গাইল একটি অসাধারণ গন্তব্য। আপনি কি টাঙ্গাইল ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন?

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

‎সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় গরু-মহিষের চোরাচালান আটক: বিজিবি’র সাফল্য

‎টাঙ্গাইল জেলা: ঐতিহ্য, শিল্প ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য মিশেল

সময় ০৩:২৩:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
টাংগাইলে মির্জাপুর মহেরা জমিদার বাড়ি। ছবি- সংগৃহিত।


‎টাঙ্গাইল, বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের এক সমৃদ্ধ জেলা, তার নিজস্ব ঐতিহ্য, মনোমুগ্ধকর শিল্পকর্ম এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সুপরিচিত। এই জেলার প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে আছে ইতিহাস, সংস্কৃতি আর উদ্ভাবনের ছোঁয়া, যা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের মুগ্ধ করে তোলে। বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়িসহ তিন পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
‎টাংগাইলের শাড়ী, চমচম, মধুপুরের আনারস এগুলো বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ও সুপরিচিত।
‎ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের তালিকায় বাংলাদেশের অন্যতম জেলা টাংগাইল। ভ্রমণ পিপাসুদের সুবিধার্থে নিচে জেলার বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো দেয়া হল।
‎টাঙ্গাইলের প্রধান আকর্ষণগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
বিশ্বখ্যাত টাঙ্গাইল শাড়ি
‎টাঙ্গাইল শাড়ি শুধু একটি পোশাক নয়, এটি বুনন শিল্পের এক অনবদ্য উদাহরণ। এর সূক্ষ্ম বুননশৈলী, আকর্ষণীয় নকশা এবং নান্দনিক সৌন্দর্য এটিকে সারা বিশ্বে পরিচিতি এনে দিয়েছে। প্রতিটি টাঙ্গাইল শাড়ি যেন হাতে বোনা এক একটি শিল্পকর্ম, যা বাঙালি নারীর সাজে যোগ করে এক বিশেষ মর্যাদা। এই শাড়ি তাঁতিদের শত বছরের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার প্রতীক।
স্বাদে অতুলনীয় পোড়াবাড়ীর চমচম

টাঙ্গাইল শাড়িসহ তিন পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় । ছবি-সংগৃহিত ।


‎টাঙ্গাইল বললে যে মিষ্টির কথা প্রথমে মনে আসে, তা হলো পোড়াবাড়ীর চমচম। এই মিষ্টি তার অনন্য স্বাদ এবং নরম, রসালো গঠনের জন্য বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত মিষ্টি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই চমচম তার ঐতিহ্যবাহী স্বাদ ধরে রেখেছে, যা টাঙ্গাইল ভ্রমণের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভ্রমণ পিপাসুরা টাংগাইলে আসলে চমচমের স্বাদ নিতে ভুলেন না। সাথে করে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের জন্য উপহার হিসেবে চমচম নিয়ে যান।
‎ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি ও স্থাপত্য নিদর্শন
‎টাঙ্গাইল জেলা ইতিহাসের এক সমৃদ্ধ ভাণ্ডার। এখানে ছড়িয়ে আছে বেশ কিছু ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি এবং স্থাপত্য নিদর্শন যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
‎ মির্জাপুর-মহেড়া জমিদার বাড়ি
‎বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী এবং অন্যতম সংরক্ষিত জমিদার বাড়ি। উনিশ শতকে নির্মিত এই স্থাপনা বর্তমানে একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
*‎মহেড়া জমিদার বাড়ির বিস্তারিত
‎প্রায় ১১.৭৪ একর জমির ওপর বিস্তৃত এই জমিদার বাড়িটি তার স্থাপত্যশৈলী এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এতে রয়েছে:
‎ * তিনটি প্রধান ভবন: এই ভবনগুলো জমিদার পরিবারের বসবাসের মূল অংশ ছিল।
‎ * কাচারি ঘর: জমিদারি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হতো।
‎ * নায়েব সাহেবের ঘর ও গোমস্তাদের ঘর: জমিদারির বিভিন্ন কর্মচারী ও কর্মকর্তার থাকার ব্যবস্থা ছিল।
‎ * মন্দির: জমিদার বাড়ির নিজস্ব উপাসনালয়।
‎ * দাস-দাসীদের থাকার ঘর: কাজের লোকেদের জন্য নির্ধারিত স্থান।
‎ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
‎১৮৯০ সালের পূর্বে জমিদাররা এই অঞ্চলে এসে তাদের জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের শাসনকালে নির্মিত এই বাড়িটি স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে সংরক্ষিত ও সু-রক্ষণাবেক্ষণকৃত জমিদার বাড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
‎অনন্য বৈশিষ্ট্য
‎মহেড়া জমিদার বাড়ির প্রাকৃতিক ও আধ্যাত্মিক পরিবেশও এর আকর্ষণ বাড়িয়েছে:
‎ * শ্মশান কালী মন্দির: জমিদার বাড়ির উত্তর পাশে এই মন্দিরটি অবস্থিত।
‎ * বিশাখা সাগর: দক্ষিণ পাশে রয়েছে বিশাখা সাগর নামে একটি বিশাল পুকুর, যা জমিদার বাড়ির সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
‎পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে মহেড়া জমিদার বাড়ি
‎এই জমিদার বাড়িটি পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান, যেখানে জমিদারদের জীবনযাত্রা এবং সে সময়ের স্থাপত্যশৈলী সম্পর্কে জানতে পারা যায়। মহেড়া জমিদার বাড়ি শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নয়, এটি স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
* দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি: একসময়কার প্রভাবশালী জমিদারদের বাসস্থান, যা তাদের জীবনযাত্রার এক ঝলক দেখায়।
‎ * হেমনগর জমিদার বাড়ি: এর আকর্ষণীয় স্থাপত্য এবং বিশাল কাঠামো দর্শকদের মুগ্ধ করে।

ধনবাড়ী নবাব প্যালেস এখনও কালের সাক্ষী হয়ে আছে ।ছবি-সংগৃহিত ।

ধনবাড়ী নবাব প্যালেস: একসময়কার ক্ষমতাধর নবাবদের স্মৃতিচিহ্ন, যা এর ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য সুপরিচিত। এখানেই থাকার জন্য প্যালেসে ভেতরে সুব্যবস্থা আছে। রাত্রি যাপন করতে চাইলে আগে থেকে যোগাযোগ করে যাওয়াই ভাল।
‎ * ২০১ গম্বুজ মসজিদ: গোপালপুর উপজেলায় সাম্প্রতিককালে নির্মিত এই বিশাল মসজিদটি তার অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য পর্যটকদের কাছে একটি নতুন আকর্ষণ।
‎এই স্থানগুলো অতীত দিনের গল্প বলে এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটায়।
*যুমান সেতু
বাংলাদেশ প্রথম দীর্ঘ যুমান বহুমুখী সেতু খরস্রোতা যমুনা নদীর উপর নির্মিত। যুমান সেতু দেখতে প্রতিদিন মানুষ জন ছুটে যান। ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের তালিকায় আছে যমুনা সেতু দেখা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য লীলাভূমি মধুপুর গড়। নানা প্রজাতির পশু পাখি সহ আছে অসংখ্য বানর। ছবি-সংগৃহিত ।

*‎মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
‎শুধু ঐতিহাসিক স্থানই নয়, টাঙ্গাইল তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও বিখ্যাত। বিশেষ করে, মধুপুরের রাবার বাগান এবং মধুপুর গড় বা বন, এখানেই প্রতিদিন শতশত ভ্রমণ পিপাসুদের ঢল নামে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য লীলাভূমি বলা চলে মধুপুর গড় কে। নানা প্রজাতির পশু পাখি সহ নানান প্রাণী আছে এখানে। পাশাপাশি হরেক রকমের গাছপালার সমাহার এই বনে।
‎যদিও অন্যান্য পশুপাখি না দেখা গেলেও বানর মানুষের সংস্পর্শে আসে। লোকজন নিজ হাতে খাবার দেয় বানরগুলো কে। এই মধুপুর গড় মানুষের কাছে দিনদিন আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
‎চারপাশের সবুজ প্রকৃতি টাঙ্গাইলকে একটি আদর্শ পর্যটন গন্তব্য করে তোলে। এখানকার শান্ত ও সবুজে ঘেরা পরিবেশ শহুরে কোলাহল থেকে দূরে এক প্রশান্তির হাতছানি দেয়। পরিবার পরিজনদের নিয়ে প্রতিদিন মানুষ ছুটে যায় মধুপুর বনে। ছুটি দিনে বনভোজন সহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠান মালা হয়ে থাকে বনের নির্ধারিত স্থানে।
*ঐতিহ্যবাহী বস্ত্রশিল্পের অতীত গৌরব
‎টাঙ্গাইল একসময় বাপ্তা, হাম্মাম এবং অন্যান্য পাঁচমিশালী বস্ত্রের জন্য সুপরিচিত ছিল। যদিও বর্তমানে টাঙ্গাইল শাড়ির প্রভাব বেশি, তবুও এই জেলার বস্ত্রশিল্পের একটি দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে, যা এর ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে।
*‎সমৃদ্ধ কৃষি খাত
‎কৃষি টাঙ্গাইল জেলার অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এখানকার উর্বর ভূমি ধান, পাট, সরিষা এবং বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি উৎপাদনে সহায়ক। এই কৃষিজাত পণ্যগুলো জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এবং স্থানীয় জীবনযাত্রার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
‎টাঙ্গাইল জেলা তার সংস্কৃতি, শিল্প, ইতিহাস এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য সমন্বয়। যারা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য টাঙ্গাইল একটি অসাধারণ গন্তব্য। আপনি কি টাঙ্গাইল ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন?