
সিলেট সেটেলমেন্ট প্রেসকে ঢাকাতে স্থানান্তরের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিলেটের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ ভূমি মালিকরা। গত ১৮ আগস্ট জারি করা এক আদেশে সিলেট সেটেলমেন্ট প্রেসকে ঢাকাতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়, যার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে পুরো সিলেট।
সিলেটের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সোনিয়া সুলতানার কাছে একটি লিখিত আবেদন পেশ করে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সিলেট সেটেলমেন্ট প্রেস এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সিলেটবাসীর সেবা দিয়ে আসছে এবং এটি স্থানান্তরিত হলে এখানকার মানুষের চরম দুর্ভোগ হবে। বিশেষ করে জরিপ কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য এই প্রেসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। প্রেসটি ঢাকায় চলে গেলে সিলেটবাসী শুধু ভোগান্তিরই শিকার হবেন না, অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলীর এই আবেদনে সমর্থন জানিয়েছেন মদন মোহন কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ ফরিদ উদ্দিন এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফজল আহমদ সহ অনেক সিনিয়র আইনজীবী।
প্রতিবাদী মানববন্ধন ও আল্টিমেটাম
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘সিলেটবাসী’র ব্যানারে একটি বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মদন মোহন কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল পীর হাবিবুর রহমান। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি সিলেট মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এমদাদ হোসেন চৌধুরী।
মানববন্ধনে বক্তারা কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়ে কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দেন। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি প্রেসটি ঢাকায় স্থানান্তরের আদেশ বাতিল করা না হয়, তাহলে তারা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
প্রবাসীদের দুর্ভোগ বাড়বে
সিলেটের ভূমি মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিলেটের মানুষ অধিকাংশই প্রবাসী এবং দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির একটি বড় অংশ তাদের অবদান। প্রবাসীরা মাত্র কয়েক সপ্তাহের জন্য দেশে আসেন এবং এই অল্প সময়ে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হয়। প্রেস ঢাকায় স্থানান্তরিত হলে তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
ভূমি মালিকদের ক্ষোভ ও দাবি
সিলেট সদর উপজেলা ও সিলেট মিউনিসিপ্যালিটি মৌজার ভূমি মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা নিয়মিত হোল্ডিং ট্যাক্স, ভূমি উন্নয়ন কর, পানি বিল, গ্যাস বিল এবং বিদ্যুৎ বিল সহ বিভিন্ন চার্জ সরকারকে দিয়ে আসছেন, অথচ এখনও ছাপা খতিয়ান পাননি। তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাদের খতিয়ান ছাপা না দিয়ে সিলেট থেকে প্রেস ঢাকায় নিতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে তারা লাগাতার আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
জোনাল সেটেলমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭-৮৮ সাল থেকে সিলেটে জরিপ কাজ শুরু হলেও এখনও তা শেষ হয়নি। তবে এই প্রেস স্থাপনের ফলে জরিপ কাজ দ্রুত সমাপ্তির পথে রয়েছে। হাতেগোনা ৫০টির মতো মৌজার ফাইনাল খতিয়ান ছাপা বাকি আছে। এর মধ্যে মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ মিউনিসিপ্যালিটি মৌজার ভূমি মালিকরা এখনও ছাপা খতিয়ান পাননি।
যদি এই প্রেস ঢাকায় চলে যায়, তাহলে জরিপের কাজ আরও দীর্ঘায়িত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
সিলেটের মানুষের অভিযোগ, সরকারের কিছু ফ্যাসিস্ট সহযোগী ঢাকায় বসে সিলেটের মানুষের সাথে ষড়যন্ত্র করে প্রেসটি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এটি হলে তারা দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, তৎকালীন অফিসার কাজী মাহবুব উর রহমানের ষড়যন্ত্রের কারণে প্রেসটি ঢাকায় চলে যাচ্ছে। সিলেটবাসী এসব ‘দালালদের’ চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তিরও দাবি জানিয়েছে।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, যেমন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির এবং সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে এই বিষয়ে অবগত করা হয়েছে, এবং তারাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারাও যেকোনো মূল্যে সিলেট থেকে প্রেস ঢাকায় স্থানান্তরে বাধা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।